Image description

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে গতকাল মঙ্গলবার বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলায় বিএনপির কর্মীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে রাতে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সকাল ১০টার দিকে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ভোলা সদরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। ভেলুমিয়া বাজারে বেলা ১১টার দিকে শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া জামায়াত কর্মী আবুল বাশারকে রাজাকার বলেন বিএনপি কর্মী মো. রিয়াজ। তখন ওই দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে রিয়াজ চোখে আঘাত পান। এ সময় বিএনপি কর্মীরা আবুল বাশারকে পিটিয়ে জখম করেন। পরে আহত দুজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর রাতে এশার নামাজের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভেলুমিয়া বাজারে বিজয় দিবসের মিছিল বের করেন। ভেলুমিয়া চরন্দ্রপ্রসাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে মিছিলটি যাচ্ছিল। এ সময় জামায়াত কর্মীরা বিরূপ মন্তব্য করেন। তখন বিএনপি কর্মীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করেন। এ ঘটনায় ভেলুমিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল হান্নানসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। এ সময় পাঁচ থেকে ছয়টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরে আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে ও ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা নেন।

ওই ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে ভোলা সদর উপজেলা জামায়াত দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা দুই দফা অতর্কিত হামলা চালিয়ে জামায়াতের অন্তত ১০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া হামলা চালিয়ে জামায়াত-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের মিছিল পছন্দ না করায় তাঁরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন।

কামাল হোসেন আরও বলেন, সকালে বিজয় শোভাযাত্রা থেকে ফেরার সময় জামায়াত নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ‘রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। এ ঘটনায় রাতে সমঝোতা বৈঠকে বসার কথা ছিল। তা না করে উল্টো হামলা চালানো হলো।

এ বিষয়ে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে রাতে বসার কথা ছিল। কিন্তু রাতের বেলা বিএনপির লোকজন বিজয় মিছিল বের করলে কিছু অল্প বয়সী জামায়াত-শিবির কর্মী বিএনপি-অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ বাধে। তাঁদের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছেন।

গতকাল রাতে সংঘর্ষের পর ভেলুমিয়া বাজারে উপস্থিত হন ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ভালো। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে জামায়াত মারমুখী ভূমিকা পালন করছে। তারা এত দিন পিআর পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করছিল। এখন তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশে অরাজকতা শুরু করেছে। ভেলুমিয়ার ঘটনা এরই একটি নমুনা।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ ও নৌবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।