ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় পুলিশ যে যুবককে শনাক্ত করেছে, তার নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। এ ঘটনার পর তার পরিচয়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং অতীতের মামলার ইতিহাস ঘিরে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
ফয়সাল করিমের পরিচয়
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। তার স্থায়ী ঠিকানা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। তবে প্রায় ৩০ বছর আগে পরিবারটি ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। পুলিশের পিসিআর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ঢাকার আদাবরের পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করতেন। গত বছরের ৮ নভেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে ওই বাসা থেকেই তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা
রাজনৈতিকভাবে ফয়সাল করিম নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার নাম ছিল। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে গঠিত ‘আসনভিত্তিক সমন্বয়ক কমিটি’র সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আইটি উদ্যোক্তা পরিচয়
পেশাগতভাবে ফয়সাল করিম নিজেকে একজন আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি ‘অ্যাপল সফট আইটি’, ‘ওয়াইসিইউ টেকনোলজি’ ও ‘এনলিস্ট ওয়ার্ক’ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
এরই মধ্যে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
‘ব্যাটল অব ৭১’ গেম নির্মাণ
ফয়সালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইসিইউ টেকনোলজি’ ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামের একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করে। বেসিসের সহযোগিতায় নির্মিত এ গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনটির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন।
অপরাধের মামলা ও জামিন বিতর্ক
ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ডাকাতির মামলা রয়েছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর আদাবরের একটি অফিস থেকে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় তিনি ছিলেন প্রধান আসামি। ৭ নভেম্বর র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করে।
তবে আলোচনার জন্ম দেয় তার জামিনপ্রাপ্তির বিষয়টি। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। মাত্র তিন মাস আট দিন পর, অর্থাৎ ১২ আগস্ট, তার জামিনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়। স্বল্প সময়ে একটি সশস্ত্র মামলায় জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফয়সাল করিমকে শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদির সঙ্গে ফয়সালের বিভিন্ন সময়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের ধারণা, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হাদির গতিবিধি অনুসরণ করছিলেন।
ফয়সাল করিমের বর্তমান অবস্থান
বর্তমানে ফয়সাল করিম মাসুদ পলাতক রয়েছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশত্যাগ ঠেকাতে তার তথ্য দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া তার সম্পর্কে তথ্য দিতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
