জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে নিয়ে আসার একটা স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা গোপন মিটিং করার সুযোগ পাচ্ছে। কোর্ট পাড়ায় জয় বাংলা স্লোগান হচ্ছে। টক শোতে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা আসছেন। ভোটের মাঠে দেখছি, জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই যে একটা সম্মিলন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা একটা পরিকল্পিত আয়োজন আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসিত করার।’
আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গতকালের যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটেই মূলত আজকের আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা তিনটি দলের নেতাদের ডেকেছিলেন। আমরা একত্রে আলোচনা করেছি। এ ধরনের পরিবেশকে আমরা কীভাবে একত্রে মোকাবিলা করব এবং সেটার জন্য যেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, সেটা যাতে অটুট থাকে। আমরা জানি, নির্বাচনে আমরা প্রতিযোগিতা করব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব, একে অন্যের বিরুদ্ধে হয়তো বলব। কিন্তু সেটা যাতে কখনোই একটা সীমাকে অতিক্রম না করে এবং আওয়ামী লীগকে যাতে কোনো সুযোগ-সুবিধা করে না দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে আমরা সকলেই একমত পোষণ করেছি।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে গুলি করা হয়।
এ সম্পর্কে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমি গতকাল বলেছি, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটা আওয়ামী লীগ যে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে নির্বাচনকে ঘিরে, সেটার একটা শুরু বলা যেতে পারে। আওয়ামী লীগকে শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, তাদের মোকাবিলা করতে হবে প্রশাসনিকভাবেও। কিন্তু একইভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আওয়ামী লীগকে যারা রাজনীতির মাঠে আনার চেষ্টা করছে, এটার বিরুদ্ধে আমাদের সকল দলকে তৎপর হতে হবে।’
‘কীভাবে কোর্ট পাড়ায় জামিন হচ্ছে? এই আইনজীবীরা কোনো না কোনো দলের সঙ্গে জড়িত। মিডিয়া হাউসগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকে, আমরা জানি। ফলে সব দলকেই এই ভূমিকা নিতে হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সেটা বলেছি। আমরা সর্বাত্মকভাবে সেই জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে কাজ করব। আমরা সহযোগিতা করব,’ যোগ করেন তিনি।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি, সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই আস্থাটা থাকতে হবে, যাতে তারা সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারে এবং অবশ্যই ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টায় যারা জড়িত, আমরা তাদের আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার চেয়েছি। শুধু তারাই নয়, বরং এই পরিকল্পনার সঙ্গে যারা জড়িত, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও যাতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়।’
‘দিল্লিতে বসে আওয়ামী লীগ সব পরিকল্পনা করছে’ অভিযোগ তুলে নাহিদ আরও বলেন, ‘ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগ এ ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না। এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা তারা করেছে। ফলে অবশ্যই ভারত সরকারকে, আমাদের এখানে যারা ভারতীয় দূতাবাসে আছে, তাদের অ্যাকাউন্টেবল (জবাবদিহি) করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ডেকে বলতে হবে, একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গণহত্যাকারীকে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়ে এরই মধ্যে একটা নৈতিক অপরাধ করেছে। এখন তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সেই আওয়ামী লীগকে সহায়তা করছে।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের আগে ভারত আওয়ামী লীগকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময় হস্তক্ষেপ করেছে। ভারত সরকারকে আমরা বলছি, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে এ ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।’