বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এ বৈঠকে।
শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আয়োজিত এ বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহও বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলের নেতারা গণমাধ্যমকে জানান, দেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো যেন ঐকবদ্ধ থাকে সেই বার্তাই তাদের দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানাতেই এই বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার লড়াই হতে পারে, তবে সেটি এমন পর্যায়ে নেওয়া যাবে না যাতে কোনো অপশক্তি তার সুযোগ নিতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা মূলত বাংলাদেশের ওপরই হামলা। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু আমরা ওই পর্যায়ে বিতর্ক করবো না যাতে করে আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হয়।
ওসমান হাদির ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ধরনের হামলা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই শক্তি দেশের ভেতরেও সক্রিয়, দেশের বাইরেও সক্রিয়। দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ যদি মনে করে দেশের নির্বাচন রুখে দিতে পারবে এটি তাদের ভুল ধারণা।
এ ছাড়া আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারেক রহমানের নিরাপত্তা দলের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, তার নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের কাছে সেই আহ্বানও জানিয়েছে বিএনপি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে এই ধরনের পরিবেশ কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এ নিয়ে আলোচনা করতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এ ঘটনা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সঙ্গে বা একজন প্রার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাই না, এটা আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে সেটার একটা শুরু বলা যেতে পারে। এ ছাড়া জুলাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসিত করার প্রস্তুতি চলছে বলেও দাবি করেন তিনি।
নাহিদ বলেন, জয় বাংলা স্লোগান হচ্ছে, মিডিয়ায় আসছে আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবীরা, ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে এগুলো পরিকল্পিত আয়োজন। তিনি দাবি করেন, ভারতের প্রশ্রয় ছাড়া আওয়ামী লীগ এই পরিকল্পনা করতে পারতো না, ভারত সরকারকেও এর জন্য কঠোরভাবে বলতে হবে। এছাড়া ভোটের মাঠে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে আনার একটি প্রতিযোগিতা চলছে বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ। তিনি বলেন, এ নিয়ে সতর্ক না হলে ওসমান হাদির সঙ্গে যা ঘটেছে সেটির পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
ওসমান হাদির এ ঘটনায় তার পরিবারের ডাকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান নাহিদ।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয় এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান মি. পরওয়ার।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধিরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।