Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ান বক্স পলিসিতে এগোচ্ছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ সমমনা ৮ দল। একক প্রার্থী দেয়ার স্বার্থে জোটের প্রধান দল জামায়াত দেড়শ’ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বেশিসংখ্যক আসনে ছাড় দিয়ে দলীয় প্রার্থী দিচ্ছে।

সমমনা ৮ দলের উদ্যোক্তা এই দুই দল ইতিমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এসব প্রার্থীদের প্রায় সবাই নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছেন। তবে ৮ দলের আসন সমঝোতা বা ঐকমত্যের নির্বাচনের স্বার্থে জামায়াতের নিদেন পক্ষে অর্ধেক এবং ইসলামী আন্দোলনের অর্ধেকের বেশি প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে হবে। 

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ফ্যাসিবাদের দোসর ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত জুলাই থেকে  রাজপথের কর্মসূচিতে সোচ্চার রয়েছে এই ৮ দল। গত ১১ই নভেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ৮ দলের শীর্ষ নেতারা একমঞ্চে ওঠেন। সর্বশেষ ৭টি বিভাগীয় সমাবেশেও ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।

এ পর্যায়ে শুরু হয় আসন সমঝোতার পালা। সোমবার ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তালিকা নিয়ে আরও ব্যাপক আকারে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে শীর্ষ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্র জানায়।

লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সমমনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শিগগিরই শুরু হচ্ছে। তবে এক আসনে এক প্রার্থীর ব্যাপারে সবাই একমত। কে কোন আসনে জিততে পারবেন, কোথায় কার রাজনৈতিক অবস্থান কেমন এই বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আছে।

জামায়াত কতো আসন ছাড় দেবে অথবা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হামিদ আযাদ বলেন, জামায়াতের কোনো নিজস্ব আসন নেই যে ছাড় দিবে, আবার কারও কাছ থেকে নেয়ার বিষয়ও নেই। ৩০০ আসনে  জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আছেন। আট দলের প্রয়োজনে যেকোনো প্রার্থী সরে দাঁড়াবেন। একই অবস্থা অন্যদের বেলাও হতে পারে। তিনি বলেন, আট দলের শীর্ষ নেতাদের আলোচনার ভিত্তিতেই আসন বণ্টন চূড়ান্ত করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ৮ দলের জয়। যেখানে যার জয়ের পাল্লা ভারী মনে হবে সেখানে ৮ দলের তরফে সেই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। অন্য রাজনৈতিক দলের মতো জামায়াতের ভেতরে অমুক দলকে এত আসন ছেড়ে দেয়া-না দেয়ার কিছু নেই বলে জানান ড. হামিদ আযাদ।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ৮ দলভুক্ত সব দলের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তি সামর্থ্য সমান নয়। সে ক্ষেত্রে যার যার অবস্থান বিবেচনায় আসন বণ্টন করা হবে। তবে সবার লক্ষ্য থাকবে আট দলকে জয়ী করা। তিনি বলেন, আমাদের ৮ দলীয় লিয়াজোঁ কমিটি জেলা উপজেলার ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে সক্রিয় হচ্ছে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ৮ দলের ঐকমত্য থাকবে।

এদিকে ইসলামী আন্দোলনের অন্য একটি সূত্র মতে, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলেও অর্ধশতাধিক আসনে মোটামুটি শক্ত অবস্থান আছে দলটির। সে ক্ষেত্রে আসন সমঝোতায় অন্তত ১০০ আসনে লড়ার প্রত্যাশা দলটির। 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে সেটা উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে শীর্ষ নেতারা যাচাই বাছাই এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তালিকা চূড়ান্ত করবেন। তবে এ দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ২৬৮ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। তন্মধ্যে ৯৩টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। আট দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৪০টি আসনে তাদের জয়লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আসন সমঝোতায় এই ৪০ আসন টার্গেট থাকবে তাদের।  

উল্লেখ্য গত সোমবার খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির সর্বশেষ বৈঠক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে আগামী ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালানো, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তফসিল দেখে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৮ দলভুক্ত প্রত্যেক দল পৃথক কর্মসূচি পালন, ৮ দলের কার্যক্রম বেগবান করতে জেলা-উপজেলাভিত্তিক লিয়াজোঁ কমিটি গঠন, ১/২ দিনের আসন সমঝোতার আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ড.এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার ও সিনিয়র নায়েবে আমীর আবদুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব এড. জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ।