Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জয় পেতে বহুমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ ও প্রার্থী চূড়ান্তকরণে দফায় দফায় বৈঠক করছেন আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। এরই মধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণার লক্ষ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে দলগুলো। প্রথমে জামায়াতে ইসলামী সমমনা অন্যান্য দলের প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে। পর্যায়ক্রমে অন্য দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে সব দল নিয়ে একসঙ্গে বসে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সমঝোতা হবে। কোন দলের কী চাওয়া, সে বিষয়ে জানছে জামায়াত। মুখ্য উদ্দেশ্য—‘ওয়ানবক্স পলিসি’ তথা একটি বাক্সে ইসলামী দলের সব ভোট দেওয়া এবং আট দল মনোনীত প্রার্থীকে সর্বাত্মকভাবে বিজয়ী করা।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে আসন সমঝোতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। শিগগির প্রতিটি আসনের বিপরীতে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। তবে আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতসহ কোনো দলেরই নারী সংসদ সদস্য প্রার্থী নেই। এদিকে শতাধিক আসনে সমমনা দলগুলো আসনের চাহিদার কথা জামায়াতে ইসলামীর কাছে প্রস্তাব দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তার মধ্যে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস রিকশা প্রতীকে কমপক্ষে ৭০টি আসন চাইবে বলে জানা গেছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে অভিন্ন কয়েকটি দাবিতে যুগপৎভাবে আন্দোলন শুরু করে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল। জামায়াত ছাড়াও অন্য দলগুলো হলো—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিস। এসব দলের দাবিগুলো হচ্ছে—অবিলম্বে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি করা এবং ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এসব দাবিতে এরই মধ্যে কয়েক দফায় কর্মসূচি পালন করেছে দলগুলো। সর্বশেষ নভেম্বরে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করেছে তারা। এখন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলগুলো।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ড. হামিদুর রহমান আজাদ কালবেলাকে বলেন, “আট দলের কার্যক্রম কোনো নির্বাচনী জোট নয়। এটি একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। আমরা ‘ওয়ানবক্স পলিসি’ নিয়ে কাজ করছি। অর্থাৎ এক আসনে আট দল মনোনীত একজন প্রার্থী থাকবেন, যা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে। যেখানে আটটি দলের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবেন, সেখানে এসব দলের অন্য কোনো দলের আর প্রার্থী থাকবে না। আমরা বিজয়ের জন্য সবাই মিলে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। যত কম সময়ের মধ্যে সম্ভব আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি শেষ করব ইনশাআল্লাহ।” এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বসে আলোচনা করব। এরপর সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতা করা হবে।’

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির এক বৈঠক পুরানা পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে পাঁচটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এগুলো হলো—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালানো; জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর তপশিল দেখে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ; মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আট দলভুক্ত প্রতিটি দল পৃথক কর্মসূচি পালন; আট দলের কার্যক্রম বেগবান করতে জেলা-উপজেলাভিত্তিক লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আট দলের মধ্যে আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু করা।

এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আমাদের আগের দাবিই অব্যাহত থাকবে। তপশিল ঘোষণার পর অবস্থা বুঝে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। এরই মধ্যে বিভিন্ন দাবিতে আমাদের মাঠপর্যায়ে বড় ধরনের কর্মসূচি সমাপ্ত হয়েছে। এখন আসন চূড়ান্ত করা নিয়ে সমঝোতা হবে। ভোট নিয়ে আলোচনা হবে। এ ক্ষেত্রে গণভোটের বিষয়টিও থাকবে। আশা করছি, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারব ইনশআল্লাহ।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি আসনে আট দলের পক্ষে একজন প্রার্থী থাকবেন। কোনো ঐক্যের বা জোটের নামে প্রার্থী হবে না। তারা হবেন দেশপ্রেমিক ও ইসলামী ঐক্যের প্রার্থী।’

জাগপার সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান গতকাল সন্ধ্যায় কালবেলাকে বলেন, তারা সর্বাত্মক ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে আলোচনায় বসবেন। তার দলের পক্ষে পাঁচটি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, যেটি সম্ভব সেটিই চাইব। এখন মাত্র আলোচনা শুরু হলো। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে পর্যায়ক্রমে বৈঠক হবে। এরপর সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে সমঝোতা হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পৃথকভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং অন্যান্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে বৃহত্তর স্বার্থে যেহেতু সমমনা দলগুলো আন্দোলনে আছে, সেজন্য তারা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবেন। আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।