মেহেরপুরের দুটি সংসদীয় আসনই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। তবে আসন্ন নির্বাচনে এই দুর্গ ভেঙে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলই তাদের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার। জানা গেছে, দুই আসনেই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির ভিতর নানা কারণে অনৈক্য রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে জামায়াত ফায়দা হাসিলের জন্য এই দিকটিকেই কাজে লাগাতে চাইছে। মেহেরপুরের নির্বাচনি আসন দুটি হলো- মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী)। মাঠপর্যায়ের তথ্যানুযায়ী, আসন দুটিতে দৃশ্যত একেবারে ব্যস্ততাহীন সময় পার করছে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত। ওয়াকিবহালরা বলছেন, নীরবতার আড়ালে রাজনৈতিক চালে এগিয়ে চলছে জামায়াত।
মেহেরপুর-১ : মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-১ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সেই ঘাঁটিতে ভাঙন ধরেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। একসময় যে এলাকাজুড়ে বিএনপির শোডাউন দেখলে চোখ ঝলসে যেত, সেই এলাকায় এখন নীরবতা। মাঠে নেই জোরালো দলীয় তৎপরতা। নেই আগের উদ্দীপনাও। এ আসনে দলটির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ। কিন্তু জেলা বিএনপি তাঁর প্রার্থিতা মানতে নারাজ। দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান তাঁর বিরুদ্ধে তুলেছেন গুরুতর অভিযোগ। তাঁর মতে, সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলবিরোধী কাজ করেছিলেন তিনি। এখন তিনি আবার এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে মাসুদ অরুণ এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন সংগ্রামের নাম। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা হবে। আর ভোটের জয় ধানের শীষেরই হবে।’ নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই মাঠে বড় লাভ এনে দিচ্ছে জামায়াতকে। দলটির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা আমির মাওলানা তাজউদ্দিন খান নীরবে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে তৃণমূলে জমিয়ে তুলেছেন এ নিয়ে নানা প্রচার। তাদের পোস্টারে ভরে গেছে অঞ্চল। সঙ্গে গ্রামেগঞ্জে চলছে দোয়া প্রার্থনার কর্মসূচি। তাজউদ্দিন খানের ভাষায়, ‘এবার মেহেরপুর-১ এ নতুন চমক দেখা যাবে।’
মেহেরপুর-২ : ভোটের উত্তাপ ছড়াচ্ছে গাংনী। দিগন্তজোড়া এখন ব্যানার-ফেস্টুন। রাস্তা, মোড়, গ্রাম-সবখানেই ব্যানারে রং ছড়াচ্ছেন বিভিন্ন প্রার্থী। বিরামহীন লাউডস্পিকার, মিছিল-মাহফিল, উঠান বৈঠকে- গাংনী এখন উৎসবের জনপদ। এই আসনে ইতিহাস বহু রঙের। ১০টি নির্বাচনে বিএনপি চারবার, আওয়ামী লীগ তিনবার, স্বতন্ত্র দুবার, ফ্রিডম পার্টি একবার নির্বাচিত হয়েছিল। প্রতিবারই পাল্টেছে জনমত। এবার বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন। তার দাবি, ২০০৮ সালে খুলনা অঞ্চলে বিএনপি যে দুটি আসন পেয়েছিল তার একটি ছিল আমার। এবারও বিজয় উপহার দেব।’ কিন্তু তার বিরুদ্ধে দলীয় কিছু নেতার অভিযোগ, দল ক্ষমতার বাইরে থাকায় তিনি দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না; বরং ব্যবসায়িক স্বার্থ বজায় রাখতে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এই ফাঁকটাকেই কাজে লাগিয়ে চলেছে জামায়াত। প্রার্থী জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘জনগণ এবার আমাদের জয় নিশ্চিত করবে।’ এদিকে এ আসনে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই এনসিপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট শাকিল আহমেদ, ও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী কাওলনা আবদুুল কাদেরও।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, তৃণমূল সংগঠনের দুর্বলতার কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেছে। এর সঙ্গে নীরব প্রচারণা, সংগঠিত তৎপরতা মিলিয়ে জামায়াত এবার নির্বাচনে নতুন চমক দেখানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।