জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজের এবং দলের অবস্থান পরিষ্কার করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন বিএনপির এই কান্ডারি। স্পষ্টভাবে দলের অবস্থান পরিষ্কারের ফলে সারা দেশের দলীয় নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। একইভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ এখন একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে পরিষ্কার ভাষায় তারেক রহমান বলেছেন, ’৭১ সালে তারা তাদের দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা এবং মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছিল। এদেরকে বাংলাদেশের মানুষের তখনই দেখা হয়ে গেছে। নতুন করে আর দেখার কিছু নেই। জামায়াতকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেছেন, ওই দলটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতোই ‘শুধু তারাই ভালো, আর সবাই খারাপ’- এমন অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে দলটি। হায়াত, মউত, বেহেশত, দোজখ এসবের মালিক একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। অথচ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ওই দলটির নেতারা তাদের প্রার্থীকে ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে বলে জান্নাতের টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন। এসব হলো মহান আল্লাহপাকের সঙ্গে পরিষ্কার ‘শিরক’ করার শামিল।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের প্রতি এদের (জামায়াতের) অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
পাশাপাশি দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি জামায়াতের এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং আগামী দুই মাস জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজের দলের গৃহীত বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ তথা ৩১ দফার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে বুঝিয়েশুনিয়ে ভোটারদের সমর্থন নিজেদের পক্ষে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর এই নির্দেশনার পর মূল দল বিএনপি ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন। তাঁরা ইতোমধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর অপপ্রচার রোধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে ধর্মকে রাজনৈতিক হীন স্বার্থে ব্যবহার, নির্বাচনে ভোটের বিনিময়ে বেহেশতের টিকিট বিক্রি, সব দলকেই দেখেছেন এবার আমাদের (জামায়াত) একবার দেখেন, সবাই খারা শুধু আমরাই ভালো, এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টতই বলেছেন, তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইসলাম কায়েমের কথা বলে তারা নিজেরাই মন্দিরে গিয়ে মন্ত্র পাঠ করছে। পুজো দিচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ে খেলাধুলার চেষ্টা করছে। বেহেশত-দোজখ নিয়ে তামাশা করছে। মহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে শিরক করছে। এ ছাড়াও বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে এদের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই। এদের অব্যাহত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজে যেমন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তেমনি তিনিই হলেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হলো বিএনপি। বিএনপি কখনোই রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে না।
অন্যদিকে ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কী ছিল সেটি দেশের জনগণ ভালো করেই জানে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই বিষয়টিই সম্প্রতি পরিষ্কার করেছেন।’ এদের (জামায়াতের) অপপ্রচারে যাতে গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক কোনো মানুষ বিভ্রান্ত না হন সেজন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতো তিনিও সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে দলের অবস্থানটা পরিষ্কার করেছেন। আসলে জামায়াতে ইসলামীর ’৭১ সালের ভূমিকা শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, সারা পৃথিবীর মানুষই জানে। এদের বৈশিষ্ট্যই হলো ক্ষমতার জন্য সবকিছু করতে পারে তারা। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মহানুভবতায় রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়ার পর জামায়াতের কার্যকলাপ, আচার-আচরণ, ’৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় বেইমানির অংশীদার হওয়া, এরপর ’৯৬ সালের নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করা- নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে ব্যবহারসহ এমন কী নেই যে তারা করেনি। এবার তো জান্নাতের টিকিট বিক্রির কাজও তাদের শেষ। কিন্তু এতে সফল হবে না। বাংলাদেশের মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যা বলেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। তিনি মোক্ষম সময়ে সমগ্র জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে তারা আসলে কারা? ’৭১ সালে তাদের কী ভূমিকা ছিল? কার দয়ায় বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। এখন আবার বিএনপির বিরুদ্ধেই ট্যাগ দেওয়া শুরু করেছে। এই স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই। এদের বৈশিষ্ট্য, দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য এদের ভূমিকা কী তা-ও এ দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এখন তারা ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে নগ্নভাবে। জান্নাতের টিকিট বেচতে শুরু করেছে তারা। কিন্তু ধর্ম নিয়ে এসব ভণ্ডামি বাংলাদেশের মানুষ আর সহ্য করবে না। আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমেই তারা জামায়াতের এসব অপকর্মের জবাব দেবে ইনশাআল্লাহ।
দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি বিতর্কিত দল। এটা নতুন কিছু নয়। দলটি সব সময়ই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মোনাফেকি করেছে। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৬, ’৯১-’৯৬ সাল সব সময়ই দেশের বিএনপি ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। এরা সব সময় স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বিগত ১৮ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনেও এদের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই। জামায়াত সম্পর্কে নতুন করে বলার কোনো অবকাশ নেই। দেশের সচেতন মানুষ এদের ভূমিকা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভালো করেই জানে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন, এদের মানুষ ’৭১ সালেই দেখেছে। নতুন করে আর দেখার কিছুই নেই। তবে তাদের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
বিএনপির (খুলনা) বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। এই দলটি সব সময়ই দেশের ও মানুষের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখে এসেছে। ’৭১ থেকে শুরু করে আজকে ২০২৫ পর্যন্ত কখনই তারা শুধু নিজেদেও স্বার্থ ছাড়া দেশের জন্য ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সর্বশেষ ফ্যাসিস্টদের সঙ্গেও আঁতাত করে চলেছে গত ১৫টি বছর। এদের মোনাফেকির জবাব মানুষ ব্যালটের মাধ্যমেই দেবে ইনশাআল্লাহ।