Image description
 

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে দুই দফায় ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। বাকী ২৮টি আসন দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে শরিকদের মধ্যে কোন দল কতটি আসন পাবে বা প্রার্থী কে হবেন, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরপরই শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে যুগপৎ সঙ্গীরা চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে। তারা চান, অতি দ্রুত আসন সমঝোতার ব্যাপারে বিএনপি যেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। যদিও এরই মধ্যে শরিকদের কয়েকজন প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি। শরিক দলের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এখন মিত্রদের আসনগুলোতেও নাম ঘোষণা করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘোষিত যেসব আসনে জোটের শীর্ষ নেতারা বাদ পড়েছেন, সেগুলোতেও মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা দাবি তাদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক নেতা শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, শরিকদের জন্য ২৮টি আসন ফাঁকা রেখে বিএনপি ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এখন শরিকদের জন্য বরাদ্দ আসন চূড়ান্ত করতে বিএনপি খুবই আন্তরিক। কারণ, একটি ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে জোরালো ভূমিকা রেখেছে এসব দলগুলো। আশা করছি, তফসিল ঘোষণার পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসন সমঝোতা সম্পন্ন হবে।

বিএনপির নেতারা আরও জানান, আগামী নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন। তাই শরিকদের মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক হিসেব-নিকাশ করতে হচ্ছে। তাছাড়া ইসি আরপিও সংশোধন করেছে, তাতে বলা হয়েছে জোটবদ্ধ হলেও প্রার্থীকে নির্বাচন করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে। নির্বাচনে প্রতীকের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তাই নিজ যোগ্যতায় জয়লাভ করতে পারবেন এমন প্রার্থী কারা, এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বিএনপির তরফ থেকে।

ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় ২৩৬ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি। তবে একদিন পরই মাদারীপুর-১ আসনে ঘোষণা করা প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফাঁকা আসনগুলোতে মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফাঁকা ২৮টি আসন আমাদের অ্যালায়েন্সের (জোট) সঙ্গে যারা আছেন, মূলত তাদের। এছাড়া বিএনপির ঘোষিত আসনের মধ্যে হয়ত দু-একটির ডিসিশন পরিবর্তন হবে পারে, সেগুলো আমরা আরও পরে ঘোষণা করব।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর আগে ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩টি প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে ঢাকার তিনটি আসন এখনও ফাঁকা রয়েছে। আসন তিনটি হলো, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭ ও ঢাকা-২০ আসন। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে সমর্থন দিচ্ছে বিএনপি। বিএনপির ‘সবুজসংকেত’ পেয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন তারা।

অন্যদিকে ঢাকা-২০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন। তাঁরা হলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা জেলা সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান (অভি)। কিন্তু এই আসনে এখনও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি।

দ্বিতীয় ধাপে ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে ঢাকার বাইরেও কমপক্ষে ৪টি আসনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মিত্ররা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং যশোর-৫ আসনে ১২ দলীয় জোট শরিক জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব রশিদ বিন ওয়াক্কাস। তবে জয়লাভ করার মতো নিজেদের শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় এখানে দলীয় লোকদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সে সময় শরিকদের ৫৯টি আসন দিয়েছিল দলটি। এর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকেই দেয় ২২টি আসন। এবারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

এদিকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর জোট গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিএনপি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দল, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরের কয়েকটি ইসলামী দল এবং বাম ঘরানার দু-একটি দলকেও নির্বাচনী জোটে নিতে আগ্রহী তারা। এ ব্যাপারে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে, যা এখনও চলমান রয়েছে। তাই নতুন কোন রাজনৈতিক দল জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে আসন বণ্টনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

শীর্ষনিউজ