এক হিসাবেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। নাটকীয় প্রত্যাবর্তন নাসির চৌধুরীর। আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গের খেলোয়াড়। ভাটির জনপদ দিরাই-শাল্লার জনপ্রিয় নেতা। মূলত সুরঞ্জিত-নাসিরের মুখোমুখি রাজনীতি গোটা দেশের কাছে উর্বর রাজনীতির প্রেক্ষাপট হয়ে উঠেছিল সুনামগঞ্জ-২ আসন। ভোট এলেই চোখ থাকতো এ আসনে। আর এর সূচনা নাসির চৌধুরীই তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি গোটা দেশকে তাক লাগিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন পরিচিত নেতা। জাতীয় রাজনীতিক। কথার জাদুকর এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে হারিয়ে নাসির চৌধুরী রাতারাতি পরিচিতি পান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও সুরঞ্জিতের কাছে হারেন নাসির চৌধুরী। এখন নাসির চৌধুরী বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিবিদ। কিছুটা অসুস্থও। তবে নিজ এলাকায় এখনো জনপ্রিয়।
বর্তমান ভোটের পরিসংখ্যান বলছে- নাসির চৌধুরী নিজেই এখন একা একশ’। সুরঞ্জিত সেন নেই। সুতরাং তার জনপ্রিয়তায় ভাগ বসানোর মতো কেউ নেই। সুনামগঞ্জ-২ আসন নিয়ে এবার বিএনপি বেকায়দায় ছিল। জামায়াত এ আসনে প্রার্থী দিয়েছে এডভোকেট শিশির মনিরকে। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি ভোটের মাঠে সক্রিয়। জাতীয় রাজনীতিতেও বর্তমানে নানাভাবে আলোচনায় তিনি। এলাকায়ও আছে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। ওদিকে বিএনপি এ আসনটি হাতছাড়া করতে চায় না। কী করবে বিএনপি, বয়োবৃদ্ধ নেতা। মাঠে আছেন বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ও বিএনপি’র ত্যাগী নেতা এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল। মাঠে না থাকলেও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ছিলেন নাসির চৌধুরী। তাকে কোনোভাবে হিসাব থেকে বাদ দিতে পারছিলেন না দিরাই-শাল্লার মানুষ। অসুস্থ শরীর নিয়ে যখনই ঢাকা থেকে এলাকায় নাসির চৌধুরী আসেন তখনই তাকে নিয়ে উৎসাহ দেখা দেয়। অনেকেই তাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পক্ষে সায় দেন। দিরাই-শাল্লা বিএনপি’র নেতারা নাসির চৌধুরীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। বৃহস্পতিবার সবাইকে চমকে দিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তরফ থেকে নাসির চৌধুরীকেই দেয়া হয় দিরাই-শাল্লায় বিএনপি’র মনোনয়ন। তৃণমূলের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলালো বিএনপি’র হাইকমান্ড। অসুস্থ হলেও নাসির চৌধুরী এখনো ভোটে ফ্যাক্টর। দিরাই-শাল্লার রাজনৈতিক নেতারা বিএনপি’র এই হিসেবে দারুণ খুশি।
তাদের মতে; সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর নাসির চৌধুরী সুনামগঞ্জ-২ আসনের মানুষের অন্যতম আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছেন। বয়োবৃদ্ধ রাজনৈতিক হিসেবে সবাই তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন, বর্তমানে নিচ্ছেনও। তিনি এলাকায় এলে দুই উপজেলা থেকে সাধারণ মানুষজন তাকে দেখতে ছুটে আসেন। গত সপ্তাহে নাসির চৌধুরী এলাকায় সফর করেছিলেন। তখন তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আর এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নাসির চৌধুরীকে প্রার্থী হওয়ার জন্য সবাই অনুরোধ করেন। তারা জানিয়েছেন, নাসির চৌধুরী প্রার্থী হওয়ায় দিরাই-শাল্লায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এবারের মনোনয়ন প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তরুণ নেতা এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল। নাসির চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন এলাকার মানুষ। নাসির চৌধুরীকে বিএনপি’র তরফ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও পাভেল ধানের শীষের পক্ষেই অটল রয়েছেন। বিচারপতি রুমির অনুসারীরাও ইতিমধ্যে নাসির চৌধুরীর পক্ষে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।