Image description

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পতনে জনগণের নজর কাড়লেও রাজনীতির মাঠে প্রত্যাশিত উত্থান ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আত্মপ্রকাশ হয় ২০২৫ সালে। আত্মপ্রকাশের সময় বিপুল জনসমাগম দেখা গেলেও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে ভোটের মাঠে তেমন কোনো সাড়া ফেলতে পারছে না নবগঠিত এই দলটি।

এনসিপির আহ্বায়ক ও চব্বিশের আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় থাকা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা এখনও দুর্বল। তিনি বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।’ সংগঠনের নবযাত্রা ও স্বল্প অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা রচনায় যাত্রা শুরু করেছেন তারা।

জনমত জরিপে তৃতীয় স্থানে এনসিপি
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইআরআই-এর ডিসেম্বরের এক জরিপে দেখা যায়, সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেওয়া এনসিপি মাত্র ৬ শতাংশ ভোটারদের সমর্থন পেয়েছে। অন্যদিকে শীর্ষে রয়েছে বিএনপি। যাদের পক্ষে রয়েছে ৩০ শতাংশ ভোটার। আর দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইসলামপন্থী দলটি পেয়েছে ২৬ শতাংশ সমর্থন।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক প্রাপ্তি তপশী জানান, এনসিপির প্রতি শুরুতে আশা থাকলেও পরে হতাশ হয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ নিজেদের মধ্যমপন্থী বলে দাবি করলেও সংখ্যালঘু ও নারীর অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা যথাসময়ে অবস্থান নেয়নি। সেপ্টেম্বরে হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দলটির ছাত্র সংগঠন একটি আসনও পায়নি। এতে জনমনে হতাশা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জোট আলোচনা ও রাজনৈতিক ঝুঁকি
দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো, আর্থিক সংকট ও অস্পষ্ট নীতির কারণে এনসিপি বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট করার আলোচনা করছে। দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়ালে একটি আসনও না পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, জোটে গেলে ‘বিপ্লবী’ ভাবমূর্তিই হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, জোটে গেলে জনগণ তাদের আর প্রচলিত তিন দলের বাইরে নতুন শক্তি বলে বিবেচনা করবে না।

অর্থসংকট ও গ্রাম পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ
অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের তুলনায় মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক মজবুতি না থাকায় গ্রামাঞ্চলে ভোটারদের আকৃষ্ট করা এনসিপি’র জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম জানান, সদস্যদের ব্যক্তিগত উপার্জন, ছোট ছোট অনুদান এবং ক্রাউডফান্ডিংয়ের উপরই নির্ভর করতে হয় তাদের। আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমি ভোটারদের বলেছি, আমার কাছে দেওয়ার মতো টাকা নেই। আমার লক্ষ্য হবে সরকারি অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করা। এনসিপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে দলটি।

রাজনীতিতে নতুনত্বের আশা
তবুও তরুণদের একটি অংশ এখনো এনসিপিকে পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে দেখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনজিলা রহমান বলেন, তারা তরুণ, তারা আন্দোলন করেছে। শুধু কর্তৃত্ববাদী হয়ে না উঠলেই তারা পরিবর্তন আনতে পারবে। নভেম্বরে দলটি সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়- দুই দিনে এক হাজারের বেশি আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। রিকশাচালক থেকে শুরু করে আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবাই সেখানে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান। ডা. তাসনিম জারা, যিনি চিকিৎসা ক্যারিয়ার ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা রাজনীতিকে ক্ষমতাধর পরিবারগুলোর বাইরে এনে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। বিএনপির নেতারাও স্বীকার করেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তরুণদের গুরুত্ব বাড়বে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তরুণদের রাজনীতিতে জায়গা দিতে পারলে তা দেশের জন্য ভালো হবে। এনসিপি নেতাদের দাবি, এই নির্বাচনে জয়ী হওয়া তাদের লক্ষ্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জয় বা পরাজয় বড় কথা নয়- এই নির্বাচনে অংশ নেওয়াই আমাদের জন্য নতুন সূচনা।