বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার অসুস্থ মাকে দেখতে হঠাৎ দেশে ফিরছেন—এমন একটি তথ্য রাতভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও কয়েকটি ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়, তিনি কাতার এয়ারওয়েজের A101 ফ্লাইটে ইতোমধ্যে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন এবং বুধবার গভীর রাতে বা বৃহস্পতিবারের যেকোনো সময়ে দেশে পৌঁছাতে পারেন। তবে এসব পোস্টের কোনো সত্যতা মেলেনি।
এর আগে ২৩ নভেম্বর রাত থেকে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুকের ইনফেকশনজনিত জটিলতায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার পর থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জোরালো গুঞ্জন শুরু হয়।
গত সোমবার গভীর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।’ এ বক্তব্যের পর গুজব আরও তীব্র হয়।
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টনের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় যুবদলের মিলাদ মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। যদি অবস্থার উন্নতি থাকে, তবে তিনি দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে আশা করেন তিনি।
প্রায় ১৮ বছর ধরে তারেক রহমান লন্ডনে ILR (Indefinite Leave to Remain) স্ট্যাটাসে বসবাস করছেন। এই স্ট্যাটাসধারীরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ব্রিটিশ নাগরিকের সমান সুবিধা পেলেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে—যেমন ভোটাধিকার নেই, নিজের নামে সম্পত্তি কেনা যায় না, সরকারি চাকরির যোগ্যতা নেই; তবে ব্যবসা, বেসরকারি চাকরি ও পরিবারের শিক্ষা-চাকরির সুবিধা বজায় থাকে। তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
তারেক রহমান কেন বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না—এ বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাদের বক্তব্য ‘চরম মিথ্যাচার’ বলে মন্তব্য করেন লন্ডন প্রবাসী আইনজীবী বিপ্লব কুমার পোদ্দার। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ব্রিটিশ হোম অফিসের নিয়ম অনুযায়ী অ্যাসাইলাম স্থগিত বা বাতিল না করে নিজ দেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায় না। নিরাপত্তা ঝুঁকি যাচাই ছাড়া যুক্তরাজ্য তারেক রহমানকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেবে না। একই কারণে বাংলাদেশ হাই কমিশনও দ্রুত ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে না।
আইনজীবী বিপ্লব পোদ্দার আরও বলেন, তারেক রহমান বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কোনো পদে নেই, তাই তার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক সুবিধাও প্রযোজ্য নয়। আর তার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হলে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল সরকারকে চাপ দিতেও পারে। তিনি উল্লেখ করেন, “টিউলিপ সিদ্দিকী নিয়ে সরকার ইতোমধ্যেই ব্যাপক চাপে আছে।”
রাতভর চলা গুঞ্জনের মাঝে কোনো সরকারি বা আনুষ্ঠানিক সূত্র এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য দেয়নি।