Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ে বছরখানেক আগে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সম্প্রতি বিএনপিও প্রার্থী ঘোষণা করায় প্রচার জমে উঠেছে। তবে আগে থেকে প্রচারে থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জামায়াত। ফলে খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি।

তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও একটি আসন নিয়ে বিএনপি এখনো দোদুল্যমান। অন্যদিকে জামায়াত তিনটি আসনেই প্রার্থী দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে তৎপর। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বললেও তাদের তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। বাম দল ও জাতীয় পার্টির (জাপা) তৎপরতাও নেই।

ঠাকুরগাঁও-১ : সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি দুবার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়ী হয়েছে। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব গেল দুই মাসে ৮ দিন ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন এবং এই সময়ে তিনি ২২টি ইউনিয়নের ১৯টিতে প্রচার চালিয়েছেন। আমাদের হাজার হাজার কর্মী মাঠে রয়েছেন।’

আসনটিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর সহ-সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এখন এলাকার নানা সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। তবে জামায়াতের প্রচার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা পয়গাম আলী অভিযোগ করেন, ‘জামায়াত মসজিদভিত্তিক গুপ্ত রাজনীতি করছে। তাদের প্রচার মূলত ফেসবুক আর টিকটকে। বাস্তবে তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি নেই।’

এ প্রসঙ্গে জেলা জামায়াতের আমির বেলাল উদ্দিন প্রধান বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা তিনটি আসনেই বিজয় অর্জন করব। আমরা উঠোন বৈঠক করছি এবং নারীরাও প্রচার চালাচ্ছেন।’

এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন জেলা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি ইয়াকুব আলী। আর জামায়াতের সঙ্গে জোট না হলে প্রার্থী হতে পারেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি হাফিজ উদ্দিন। তাঁরাও রয়েছেন প্রচারে।

ঠাকুরগাঁও-২ : বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈলের একাংশ নিয়ে গঠিত এই আসন গত ৩৭ বছর আওয়ামী লীগের দবিরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের দখলে ছিল। গেল ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আটটিতে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ বা জোটের শরিকেরা। আওয়ামী লীগের দবিরুল ইসলাম পরিবারের অনুপস্থিতিতে আসনটিতে নতুন করে শক্তি সঞ্চারের চেষ্টা করছে জামায়াত ও বিএনপি। তবে গত জুলাইয়ে বিএনপি মহাসচিবের ভাইয়ের গাড়ি ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করায় দলীয় কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও বর্তমানে এই উপজেলায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই, সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেনি দলটি। জোটের জন্য ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। এর সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত। তাদের প্রার্থী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এ আসনে দলের প্রার্থী হয়ে আসছেন।

বিএনপি জোটের শরিক হয়ে আসনটিতে প্রার্থী হতে চান গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান। সে কারণে তিনি গত সেপ্টেম্বর থেকে এলাকায় উঠান-বৈঠক ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে এই আসন নিয়ে বিএনপিতে দুটি পক্ষ সক্রিয়। একপক্ষ মহাসচিব মির্জা ফখরুল বা তাঁর পরিবারের সদস্যকে চায়, অন্যপক্ষ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ডা. আব্দুল সালামের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সাবেক এমপি জেড মর্তূজা চৌধুরীও নিজের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী বলছেন, ‘এই আসনটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এবার এই আসনে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও-৩: রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি বহুপাক্ষিক লড়াইয়ের সাক্ষী। গত ১০টি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি চারবার, আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিএনপির প্রার্থী দুবার করে জয়ী হয়েছে। এ আসনে পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও রানীশংকৈল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিজানুর রহমান।

এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদ মনোনীত কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন নতুন প্রার্থী হিসেবে বেশ জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তুজা সেলিম এবং জাকের পার্টি থেকে ছাত্রনেতা বেলায়েত হোসেন লিটনও প্রচার চালাচ্ছেন।