সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্রমাগত হেনস্তার ঘটনায় বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আসিফ সৈকতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আসিফ সৈকতই তার বিরুদ্ধে হেনস্তাকারীদের লেলিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ৫১ মিনিটে ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে এসব কথা বলেন মিতু। ১৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের এই লাইভে তিনি জানান, আসিফ সৈকতের বিরুদ্ধে দেশের বাইরেও নারী হেনস্তার অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে বিশেষ সুবিধায় তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন মিতু।
আসিফ সৈকত ড্যাবের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের কনসালটেন্ট (আইসিইউ/সিসিইউ) পদে কর্মরত রয়েছেন। ২০২২ সালে বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮১ সংশোধন করে ৬ষ্ঠ গ্রেডের জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) পদে ৪০৯ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। বহুল সমালোচিত বিশেষ ওই বিসিএসে নিয়োগ পান আসিফ সৈকত। এ ছাড়া আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের রমরমা বাজারে ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিলেন তিনি।
ফেসবুক লাইভে এনসিপি নেত্রী ডা. মাহমুদা মিতু বলেন, আসিফ সৈকত নামে একটা লোক কিছু স্ক্রিনশট ছাড়ে কিছুদিন পর পর, তার সাথে প্রথম ঝামেলাটা হয়েছে ও প্রথমে আমার দলের সর্বোচ্চ নেতার ফ্যামিলি নিয়ে একটা কথা বলছিল। আমি এটা প্রটেস্ট করার পরে এই আসিফ সৈকত তারেক জিয়ার নামে আমার ফেক স্ক্রিনশট নিয়ে শুরু করছে। সবাই জানে যে ও টোটালি একটা গুজববাজ, পুরোপুরি গুজব ছড়ায়। যা লেখে সবসময় মিথ্যা লেখে। সে পুরা একটা কমিউনিটিকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ও এই কাজটা করে এবং কমেন্টস অফ করে রাখে। এই লোকটার নামও আমি মুখে নিতে চাই না। কারণ ওর নাম মুখে নেওয়া মানে হচ্ছে ওকে একটু পর্যায়ে নিয়ে আসা।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শুরু থেকেই তাকে হেনস্তা করে আসছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আসিফ সৈকত অনলাইনে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করছে। অনেক বেশি। আজকে পুরা যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এটার পুরা দায় আমি আসিফ সৈকতকে দেব। শুধু আজকে না, গত কয়েক মাসে আমাকে নিয়ে যা হয়েছে, আমি যতটা না বিএনপির-ছাত্রদলের ছেলেদেরকে দায়ী করব, তার চেয়েও অনেক বেশি দায়ী করব আসিফ সৈকতকে।
তিনি আরও বলেন, আসিফ সৈকত নাহিদ ইসলামের (এনসিপি আহ্বায়ক) পরিবারকে নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলেছিল। সেটার আমি প্রতিবাদ করছি। সেই থেকেই ছেলেটা আমার পিছনে লাগছে এবং কন্টিনিউয়াসলি সে আমার নামে ফেক পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। কখনো রেড ক্রিসেন্টের দুর্নীতি, কখনো তারেক রহমানের নামে আজেবাজে কথা। আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা শুনলেই আসিফ সৈকত ধুম করে লাফ দিয়ে ওঠে। এই ছেলেটা সরকারি চাকরি করে। সরকারি চাকরি করা অবস্থায় এইভাবে কেউ কাউকে হ্যারাস করতে পারে কিনা আমি জানিনা।
আসিফ সৈকত আওয়ামী লীগ আমলে বিশেষ সুবিধায় নিয়োগ পেয়েছিলেন দাবি করে ডা. মিতু বলেন, আওয়ামী লীগের সময় যে অ্যাডহকে নিয়োগ হয়, একমাত্র আসিফ সৈকত সেই ছেলেটা যে ঢাকায় পোস্টেড ছিল। আওয়ামী লীগের সময় অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন সে কট্টর জাতীয়তাবাদী। আমি একজন নারী, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং এই আসিফ সৈকতের কারণে আমার এই হারাসমেন্টগুলো হচ্ছে নিচ্ছে এটা অফিশিয়ালি ড্যাবকেও জানিয়েছি। তারপরও ড্যাব কেন ওকে পোস্ট দিল আমি জানি না। এই ছেলে অনেকদিন আগে থেকেই আমার পেছনে কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার মত মানুষ লেলিয়ে দেয়। আমার বলতে খুব খারাপ লাগছে। আমি যতদূর জানি বিদেশে নার্স হ্যারাসমেন্টের হিস্ট্রি তার আগে থেকেই। নার্স হ্যারাসমেন্টের বিষয়ে তার একটা মামলা বোধহয় চলেছিল। কিভাবে কিভাবে যেন বিদেশ থেকে চলেও আসছে।
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যে যে জিনিসগুলো আমার সাথে হয়েছে, ওরা যে যে জিনিসগুলো করেছে এগুলো সবকিছু আমার রেকর্ডে আছে। আপনারা যদি কেউ মনে করেন যে আইনি সহায়তা দিবেন, আমি আমার পার্টির সাথেও আলাপ করব। আইনি সহায়তায় এখন যেতে হবে। এটা আসলে খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমার আসলে ধৈর্যের লিমিট ক্রস করে গেছে। সত্যি কথা যেটা, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তার মানে এই না যে আমি দুর্বল হয়ে গেছি। এই সহ্য করতে পারছি না এটার মানে হচ্ছে যে আমি আর কাউকে ছাড়ব না। এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিব না। যে যা করবে আমি সেটার একদম সঠিক জবাব দিয়ে দিব।
তিনি বলেন, সবচেয়ে মজা লাগছে একটা জিনিস ভেবে কি জানেন? আমি হ্যারাসড হচ্ছি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুব মজা পাচ্ছে। আমাদের জায়গা থেকে খুবই কষ্ট লাগছে যে ওরা এখন বলছে- তোমাদের লোকজনই, তোমাদের মানুষজনই তোমাকে হ্যারাসড করছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার।