Image description

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের আপামর জনগণ পুরোনো, বস্তাপচা, দুর্গন্ধময় সেই রাজনীতি আর চায় না। এই রাজনীতির আমূল পরিবর্তন চায়। সংস্কার চায়। নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। নতুন বাংলাদেশ পুরাতন ফর্মুলায় আর চলবে না।

আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় আয়োজিত এক গণসমাবেশ থেকে তিনি এ কথা বলেন। ভাষানটেকের বিআরপি মাঠে ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এসএম খালিদুজ্জামানের পক্ষে এই ছাত্র-যুব ও নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমান। বক্তব্যে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশের জন্য নতুন ফর্মুলার’ ব্যাখ্যাও দেন তিনি। বলেন, আগামীতে জনগণ কোনো দলের পক্ষপাতদুষ্ট কোনো সরকার দেখতে চায় না। জনগণ দেখতে চায় জনগণের সরকার, যে সরকারের নিয়োজিত প্রত্যেকটি ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনগণের স্বার্থ নিয়ে ভাববে। জনগণের স্বার্থ জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার পর জনগণের অংশ হিসাবে সেও তার অংশ ভোগ করবে।

জামায়াত আমির আরও বলেন, যে সরকার জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না। যে সরকার দুর্নীতিতে জড়াবে না। যে সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে কেউ চাঁদাবাজি করার দুঃসাহস দেখাবে না। যে সরকারের সময় সমাজের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। নারী-পুরুষ সকলেই সম্মানের সাথে শান্তিতে এই সমাজে বসবাস করে উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার হবে, ভূমিকা রাখবে। পুরুষরাও রাখবে, নারীরাও রাখবে। এই নতুন ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জনগণ দেখার জন্য মুখিয়ে আছে।

জামায়াত আমীর বলেন, বিপুল পরিমাণ রক্ত আর জীবন দিয়ে চব্বিশের পরিবর্তন এসেছে। মানুষ আশা করেছিল ফ্যাসিবাদ চিরদিনের জন্য বাংলার জমিন থেকে খতম হয়ে যাবে। বিদায় নেবে। আফসোসের বিষয় ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয় নাই। ফ্যাসিবাদীদের একটা অংশ বিদায় নিয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে রয়ে গেছে। এ পর্যায়ে ফ্যাসিবাদ টিকে থাকার লক্ষণ হিসেবে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারি, নারীদের অসম্মান করা ও দেশকে গায়ের জোরে অস্থির করে তোলার কথা বলেন তিনি।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের কর্মসূচি সমর্থন করে, যাদের বক্তব্যে আস্থা রাখে তাদেরকে বাছাই করে নেবে। আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানানোর জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমাদের দলকে জনগণ বেছে নেয়, আমরা সকল রাজনৈতিক দল এবং শক্তিকে আহ্বান জানাবো, আপনারাও আমাদেরকে সমর্থন দেবেন, অভিনন্দন জানাবেন এবং আপনাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা দেশ গড়ব।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। জাতিকে যারা বিভক্ত করে তারা জাতির দুশমন। আমরা ওই দুশমনের রাজত্বের চাষ আর বাংলাদেশে হতে দেবো না। সুশাসন, সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ তৈরি করা গেলে সমাজে বিভাজনের রাজনীতির ব্যবসা চলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, জনগণের ম্যানডেটে আসতে পারবে না চিন্তা করে এখন কোনো কোনো জায়গায় পুরাতন সন্ত্রাসীরা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কোথাও আমাদের প্রচারমিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কোথাও মা-বোনদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। কোথাও আমাদের প্রচার উপাদান উপকরণসমূহ ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

জামায়াত ক্ষমতায় আসলে নারীদের বন্দি করে ফেলা হবে—এমন ‘অপপ্রচারও’ চালানো হচ্ছে বলে জানান জামায়াত আমির। বলেন, আমরা মুখে নয় কর্মের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ সকল অপপ্রচারের জবাব দেবো। এই সমস্ত অপপ্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার দিন শেষ।

তিনি আরও বলেন, দায়িত্বশীল জনগণকে আমরা একটা দায়িত্বশীল সরকার উপহার দেবো ইনশাআল্লাহ। এই সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি কোনো শক্তির লাল চক্ষুকে আমরা পাত্তাই দেবো না।…জনগণকে তাদের অধিকার চেয়ে নিতে হবে না। সরকার বাধ্য থাকবে জনগণের অধিকার তাদের ঘরে পৌঁছে দিতে।

এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের দেশে অন্য ধর্মের মানুষের অধিকার নিয়েও কথা বলেন জামায়াত আমির। বলেন, ধর্মীয় কোনো বিশ্বাস ধারণ করা প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে কোনো জোর জবরদস্তি চলবে না।…আগামী নির্বাচনে জামাতে ইসলামীর হয়েও তাদের (ভিন্ন ধর্মাবলম্বী) কেউ কেউ ইনশাআল্লাহ সংসদ সদস্য পদে লড়াই করবে। এর মাধ্যমে আমরা জাতিকে ঐক্যের জায়গায় আনতে চাচ্ছি।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বের সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা-১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এসএম খালিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীকে বলতে চাই—আগামীতে গুমমুক্ত, খুনমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে দাঁড়িপাল্লার বিকল্প নাই।এ ছাড়া নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ‘মানবিক ঢাকা’ গড়ে তোলার কাজে অংশী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

সমাবেশস্থলে নারীদের বসার জন্য আলাদা জায়গা ছিল। সেখানে জামায়াত আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়।