বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না। শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ পলাতক বা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে কারাগারে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন পথে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব অনমনীয়, তাঁদের মধ্যে অনুশোচনা নেই।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর গত দুই দিনে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর যে মনোভাব জানা যাচ্ছে, তা হলো আগামী নির্বাচনে যাতে দলটিকে অন্তর্ভুক্ত করে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন বিদেশে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। আর সেটা সম্ভব না হলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সেই চেষ্টা করবে দলটি।
এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন পথে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব অনমনীয়, তাঁদের মধ্যে অনুশোচনা নেই।
তবে এসব চেষ্টা ব্যর্থ হলে কী হবে, সেই বিষয়ে কোনো ধারণা নেই নেতাদের। এমনকি অতীত ভুলের বিষয়ে ক্ষমা চাওয়া কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিবাদ মেটানোর কোনো চেষ্টাও নেই তাঁদের। দলটির ভেতরে ‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগের আকাঙ্ক্ষা আছে। বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও অতীতের ভুল স্বীকার করা এবং দল পরিশুদ্ধির বিষয়ে পরামর্শ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার কথা শুরু থেকে বলে আসছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সম্প্রতি ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল না। এটা শেখ হাসিনার ভুল স্বীকার বা পরিশুদ্ধির পথে হাঁটার উদাহরণ কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
দলটির ভেতরে ‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগের আকাঙ্ক্ষা আছে। বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও অতীতের ভুল স্বীকার করা এবং দল পরিশুদ্ধির বিষয়ে পরামর্শ রয়েছে।
জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন এবং শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে শত্রুতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ফলে এই সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বাভাবিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না দলটির নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ের জন্য ঝটিকা মিছিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ঘিরে অনলাইনে ডাক দেওয়া ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির আড়ালে চোরাগোপ্তা ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি পুড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে দলটির নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত অনলাইনে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের হয়তো ভবিষ্যতে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। এমনকি আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র কিংবা অন্য দলের হয়ে আওয়ামী লীগের কারও কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ফিরে আসা নির্ভর করছে দলটির বর্তমান নীতি ও কৌশল পরিবর্তনের ওপর। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে ৭৯ বছর বয়সী শেখ হাসিনার রাজনীতিতে কার্যকরভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।
অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের পলাতক অবস্থা বিবেচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মনে করেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, ওই সরকারের আচরণের ওপর আওয়ামী লীগের এবং তাঁদের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে। ফলে তাঁদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ঘিরে অনলাইনে ডাক দেওয়া ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির আড়ালে চোরাগোপ্তা ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি পুড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ।
ফিরে আসার পথ কী?
আওয়ামী লীগের সূত্র এবং বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ফিরে আসার দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, যেভাবে তারা বিদায় হয়েছে, সেভাবে যদি আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে; যা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই। কারণ, দলীয় প্রধানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বিদেশে পলাতক। দেশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই কারাগারে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাইরে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করেন কেবল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কিংবা তরুণ নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছ থেকে যেসব খবর জানা যাচ্ছে, পলাতক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। বিশেষ করে কলকাতায় থাকা নেতারা দলীয় সরকারের পতন ও দলের বর্তমান অবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারূপ করছেন। দেশে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে যে টাকা দরকার; তা কারা দেবেন, সেটা নিয়েও বিভেদ আছে। ফলে আওয়ামী লীগ দ্রুত সংগঠিত হয়ে কিছু করে ফেলবে, তা বিশ্বাস করছেন না দলের নেতারাই।
দেশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই কারাগারে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাইরে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করেন কেবল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কিংবা তরুণ নেতা-কর্মীরা।
দলটির ফিরে আসার অপর যে পথ দেখছেন বিশ্লেষকেরা, সেটা হচ্ছে ভুল স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে জনগণের কাছে আরেকবার সুযোগ প্রার্থনা করা। এখন পর্যন্ত সেই চিন্তা বা ইচ্ছা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়েই নেই বলেই জানা গেছে। দলটির নেতাদের ভাষ্য, দোষ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে শেখ হাসিনা এবং দলটির নেতারা যে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছেন, সেটা স্বীকার করে নেওয়া। এ জন্যই তাঁরা দোষ স্বীকার করতে রাজি নন।
এ ছাড়া নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেও আওয়ামী লীগ ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে। দলটির ভেতরে এমন আলোচনা আছে যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে সরে গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যের হাতে ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগকেই দূরে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা আছে। তবে এটা এখনই করতে রাজি নন শেখ হাসিনা; বরং খারাপ সময় বিতর্কিত নেতাদের দিয়েই পার করতে চান তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতাদের যে ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটা হলো, ‘আমরা মানি আর না মানি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় খুবই অর্থবহ। আমরা যতই অবৈধ রায় বলি না কেন, তা বদলাতে হলে আমাদের ক্ষমতায় আসতে হবে। আর তা কত বছর পরে সেটা সম্ভব, তা কেউ জানে না।’
কোনো কোনো নেতার এমন ভাষ্যও পাওয়া যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্ব বড় বিপদে আছে, এটা সবাই স্বীকার করছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেন পড়তে হয়েছে, এর সমাধান কী, সেটা নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা হচ্ছে না।
সহানুভূতি পাওয়া কঠিন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪০০-র মতো ছাত্র-জনতা হত্যার তথ্য এসেছে। ৩০ হাজারের মতো মানুষ আহত; যাঁদের অনেকেই চোখ হারিয়েছেন, হাত-পা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব আহত-নিহতের পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর।
গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের দাগ মুছে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই। অভ্যুত্থানে আহত-নিহতের পরিবার আওয়ামী লীগের ফিরে আসা চাইবে না। ফলে সরকারের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের প্রতি বরাবরই শত্রুভাবাপন্ন। তাই সরকারও তাদের কোনো ছাড় দেবে না। বড়জোর আওয়ামী লীগের কিছু লোক স্বতন্ত্র বা অন্য দলের হয়ে ভোট করতে চাইলে তাতে হয়তো বাধা দেওয়া হবে না।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের হাতে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সূত্র বলছে, ভোটের মাঠে যত কৌশলই করা হোক না কেন, ক্ষমতায় গেলে এই দুই দলের কেউ-ই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে সাদরে গ্রহণ করবে না।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের ঘোর বিরোধী। তাদের শক্তি এখন যা-ই থাকুক না কেন, সরকার তাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের হাতে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সূত্র বলছে, ভোটের মাঠে যত কৌশলই করা হোক না কেন, ক্ষমতায় গেলে এই দুই দলের কেউ-ই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে সাদরে গ্রহণ করবে না।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আওয়ামী লীগ একেবারে শত্রু মনে করে। অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে অন্তত কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের জামিন পাওয়া সহজ হতে পারে। আর নেতা-কর্মীরা জামিন পেলে ধীরে ধীরে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভারত, বিভিন্ন বাহিনীর ওপর ভরসা
সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের একটা বড় অংশই ভারতে আশ্রয় নেন। গত দেড় বছরে ভারতে অবস্থানকালে পালিয়ে থাকা এসব নেতা-কর্মীকে বড় কোনো বিপদে পড়তে হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভারত সরকার তাঁদের প্রতি সদয় এবং সহযোগিতামূলক আচরণ করছে।
এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী দেশে নিজেদের হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভারতের এই সহযোগিতামূলক মনোভাব থেকে তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে প্রতিবেশী প্রভাবশালী এই দেশ তাঁদের দেশে ফিরতে সহায়তা করবে। এই বার্তা দেশে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও আশা দেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে ধীরে ধীরে সেই আশায় ভাটা পড়েছে। তবে এখনো দলটির অনেকে ভারতসহ বিদেশি শক্তিকে ত্রাতা হিসেবে দেখেন।
গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। অনলাইন মাধ্যমে নানা ধরনের বিষোদ্গার করেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়ী করে বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী দেশে নিজেদের হারানো অবস্থান ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সাবেক একজন সদস্যের মতে, এখন নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত রাখাও জরুরি। মনোবল ঠিক রাখতে দেশি-বিদেশি শক্তির সাহায্য পাওয়া যাবে—এমন আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, ১৪-দলীয় জোটের পুরোনো মিত্রদের পাশে পাবে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সাংগঠনিকভাবে ও সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে তাদের নেতৃত্বকে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলটি নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে ভাববে বলে তিনি মনে করেন।