Image description
চট্টগ্রামে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাড়িতে অভিযান আটক ৭

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রায় ঘোষণার দিনকে কেন্দ্র করে কথিত লকডাউনের নামে নাশকতা শুরু করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রামেও ফ্যাসিস্টের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা আড়াল থেকে নানা নাশকতার ছক আঁকছে। যানবাহনে আগুন, ককটেলবাজি, ঝটিকা মিছিলের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য ঢালা হচ্ছে টাকা। দেশে-বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা এ নাশকতার উসকানি দিচ্ছে।

এদিকে গতকাল বুধবার ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমা হিলের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সে বাড়িতে নাশকতামূলক কর্মকা-ের প্রস্তুতি চলছিল এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযানে যায় পুলিশ। তবে তার আগেই ক্যাডারেরা সরে যায়। ওই বাড়ি থেকে সাত জনকে ধরে থানায় নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে বিদেশে পলাতক নওফেল ও তার সহযোগীরা চট্টগ্রামে ঘাপটি মেরে থাকা ক্যাডারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছে।

বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রক্তাক্ত এক সফল বিপ্লবের মাধ্যমে পতন হয় ফ্যাসিবাদী হাসিনার মাফিয়া সরকারের। হাসিনার মতো চট্টগ্রামে তার সহযোগীরাও দেশ-বিদেশে পালিয়ে যায়।

তবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক নানা কর্মকা-ে লিপ্ত হয় পতিত সরকারের দোসরেরা। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে তাদের সেইসব অপচেষ্টা ভ-ুল হয়ে যায়। এখন ১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে ফের নানা নাশকতার পরিকল্পনা করছে বিতাড়িত আওয়ামী ক্যাডার ও তাদের সুবিধাভোগীরা। চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোনো নাশকতা করতে না পারলেও বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করছে ক্যাডাররা। এর মধ্যে কয়েকটি এলাকায় জনতার হাতে বেশ কয়েকজন ক্যাডার ধরা পড়েছেন। গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন অনেকে।

গতকাল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নাশকতামূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে নগরীতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, হাসিনা পতনের দেড় বছর পার হলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতার খুনি ফ্যাসিস্টের দোসররা ধরা না পড়ায় তারা নাশকতার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের এজে-া নিয়ে মাঠে নেমেছে। আর এ সুযোগে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা আসকারা পেয়ে রাস্তায় নামার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের অনেকে এখন বিদেশে বসে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির মদদ দিচ্ছে, অর্থের জোগান দিচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় ছাত্র সমাবেশ থেকে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নওফেলের বাসায় অভিযানে যায় পুলিশ। বিকেলে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পূর্ব নাসিরাবাদের চশমাহিলে নওফেলের বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি সফল করতে নওফেলের বাসায় কার্যক্রম স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৈঠক করছেন বলে একজন ‘জুলাই যোদ্ধার’ একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ফেসবুকে একজন ‘জুলাই যোদ্ধার’ দেয়া একটি স্ট্যাটাস তাদের নজরে আসে। সেখানে উল্লেখ ছিল, নওফেলের বাসায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে মিটিং করছেন ১৩ নভেম্বরের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে। স্ট্যাটাস দেয়ার পর আরো কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা ওসিকে ফোনেও বিষয়টি অবহিত করেন। তখন ওসি বিষয়টি সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন এবং নির্দেশনা পেয়ে অভিযান শুরু করেন।

ওসি সোলাইমান আরও জানান, পুরো ভবনে অভিযান চালিয়েছি। ওই বাসায় এখন পরিবারের সদস্য কেউ থাকে না। সাতজনকে পেয়েছি, যারা নিজেদের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাদের আমরা আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। যাচাইবাছাই করে তাদের মধ্যে যদি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কিংবা ফ্যাসিস্টের সহযোগী কেউ থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নওফেলের ছয়তলা বাসার চতুর্থ তলায় রান্নাবান্নার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নিয়মিত রান্না হয় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন ও বিএনপি নেতা নিয়াজের যৌথ মালিকানায় নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদে ইয়াকুব সেন্টারে ক্যাফে মিলানো নামে একটি রেস্তোঁরা আছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রেস্তোঁরাটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ফুডপান্ডা বা অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে খাবার সরবরাহ করা হয়। নওফেলের বাসার চতুর্থ তলার ওই রান্নাঘরে সেই খাবার রান্না করা হয় এবং প্যাকেটে ভরে সেটা সরবরাহ করা হয়। বুধবার দুটি অর্ডার পেয়েছিলেন তারা, যেগুলো দুপুর ২টার মধ্যে সরবরাহ করা হয়। অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমে বা নগদ টাকা গ্রহণ করে বিল দেওয়ার দুটি মেশিন ওই বাসায় পেয়ে সেগুলো জব্দ করেছে পুলিশ। তবে নওফেলের বাসায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে সভা করার খবরটি ‘গুজব’ ছিল বলে জানান ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান।

এদিকে সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায় যখন অভিযান চলছিল, তখন নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় বিপুল সংখ্যক যুবক লাঠি নিয়ে জড়ো হয়ে ‘জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রাম’র ব্যানারে সেøাগান দিচ্ছিলেন। ব্যানারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে লাঠি মিছিলের কথা উল্লেখ করা হয়। জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রামের একজন সংগঠক সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সাম্প্রতিক যে অপতৎপরতা সেটা রুখে দিতে আমরা লাঠি মিছিলের আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চাই, জুলাই আন্দোলনের অধিকারের প্রশ্নে এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সজাগ আছি। আমরা যারা জুলাই বিপ্লবের সময় এই বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট এলাকায় লড়াই করেছি, আমরা এখনো রাজপথে আছি।