Image description

মতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বীকার করেছেন, গত বছরের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনী ‘অবশ্যই ভুল’ করেছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। খবর আউটলুক ইন্ডিয়ার।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।

দেশে আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে তার ‘সন্দেহ’ আছে। আর যদি নির্বাচন হয়, তবুও তার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকায় সেই নির্বাচন ততটা বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।

তবে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, তিনি তার সমর্থকদের নির্বাচন বয়কট করার জন্য আহ্বান জানাননি এবং ‘সহিংস আন্দোলনের’ বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং সহিংস পরিস্থিতিতে সাড়া দিচ্ছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপে অবশ্যই ভুল করেছে। তবে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল আনুপাতিক প্রকৃতির, সৎ বিশ্বাসে নেওয়া এবং প্রাণহানি কমানোর উদ্দেশ্য থেকে।’

শেখ হাসিনা যখন এসব মন্তব্য করলেন, তখন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) তার এবং তার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর শেখ হাসিনাই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতাকারীদের বিচারের জন্য এই আইসিটি পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতে দোষী সাব্যস্ত করে রায় পূর্ব থেকে নির্ধারণ করা আছে। যখন এটি দেওয়া হবে তখন আমি অবাক হব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলো আমার রাজনৈতিক শত্রুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ভুয়া ট্রাইব্যুনাল, যারা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চায়। মৃত্যুদণ্ডের দাবিও একই উদ্দেশ্যে তোলা হয়েছে।’

তবে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ আদালতের সামনে দাঁড়াতে ভয় পান না বলেও জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেম, ‘প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে হলে আপনাকে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি জমা দিতে হবে। আমি কখনও এমন কোনো চিঠিতে স্বাক্ষর করিনি, রাষ্ট্রপতিও কোনো চিঠি পাননি।’

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ মাস ধরে নির্বাচনের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে কিনা। আর নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে তা বৈধ হবে না।’

শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। তারা নির্বাচিত নন, জনসাধারণের কাছে জবাবদিহিতার নীতির প্রতি তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘সব দলের জন্য ক্ষতিকর’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার দল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য ‘শান্তিপূর্ণ’ পদ্ধতিতে প্রচারণা চালাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি বয়কটের ডাক দিইনি। আমি যে বিষয়টি তুলে ধরছিলাম তা হলো, যদি লাখ লাখ আওয়ামী লীগের ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থনের সুযোগ না পান, তাহলে তারা মোটেও ভোট দিতে যাবে না।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যা-ই ঘটুক, আমাদের প্রচারণা হবে শান্তিপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের আর যা দরকার তা হলো আরেকটি সহিংস আন্দোলন।’

পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ‘কখনও’ ভুলবে না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, পাকিস্তানের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক রাখা যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এটি পরিমাপযোগ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে। যার প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা করে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান সত্ত্বেও ১৫ মাসের শাসনামলে ইউনূস সরকার একটিও নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি। আমি নিশ্চিত নই, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে। এমনকি যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকে, তাহলে তা বৈধ হবে না। আমাদের ওপর কোটি কোটি বাংলাদেশি ভরসা রাখছেন। লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে আপনি দাবি করতে পারেন না যে, তাদের সম্মতিতেই সরকারে আছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয় ইউনূস অথবা তাকে নিয়ন্ত্রণকারী চরমপন্থিরা, যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। তারা নির্বাচিত নন, জনসাধারণের জবাবদিহিতার নীতির প্রতি তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ নয়, বরং এটিই এখন মূল বিষয়।’