Image description
বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় শরিক ও মিত্ররা, সবার দৃষ্টি তারুণ্যনির্ভর এনসিপি নেতাদের ওপর

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেষ সময়ের দরকষাকষি চলছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। কে কার সঙ্গে বা কোন জোটে গেলে বেশি আসন পাওয়া যাবে এবং নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি- এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে রাজনীতির নয়া সমীকরণে ছুটছে তারা। বিশেষ করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ছায়াতল খুঁজছেন- অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি দলের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি এবং জামায়াত উভয় পক্ষের শরিক ও মিত্ররা তাদের স্ব স্ব জোটের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় ব্যস্ত। দৌড়ঝাঁপ করছেন কে কত বেশি আসন আদায় করে নিতে পারেন বিএনপি ও জামায়াতের কাছ থেকে। তার মধ্যে সবার বিশেষ দৃষ্টি এখন তারুণ্যনির্ভর নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর। কোন দিকে ঝুঁকছেন তারা? গত সোমবার বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরদিন এনসিপি ঘোষণা দিয়েছে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে তিন আসনে নির্বাচন করবেন- সেসব আসনে এনসিপি কোনো প্রার্থী  দেবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ভোট সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমমনাদের সঙ্গে জোর আলোচনা চলছে বিএনপির। সমমনা দলগুলো বিএনপির কাছে শতাধিক আসন দাবি করেছে। তবে কে কটি আসন পাবে- তা নিয়ে চলছে দরকষাকষি ও দফায় দফায় আলোচনা।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশসহ সমমনা আটটি দলের মধ্যে আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। এনসিপির পক্ষ থেকেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি জামায়াত নেতাদের। 

ঘোষিত সময় অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে আর মাত্র চার থেকে সাড়ে চার মাস বাকি। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগেই প্রার্থী নির্ধারণ ও কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো রাখঢাক না রেখে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আমরা ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। বাকি ৬৩টি আসন দলের অনিষ্পন্ন আসন এবং শরিক ও সমমনা দলের প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। সেগুলো চূড়ান্ত করতে আলোচনাসহ প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্রমতে, বিএনপির কাছে সমমনা দলগুলো মিলে ১০০টিরও বেশি আসন দাবি করেছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ একাই দাবি করেছে ৫০টি আসন। এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) চায় ১৫টি আসন। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোট দাবি করেছে ২০টি এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট চেয়েছে ৯টি আসন। আরও কয়েকটি সমমনা দল তালিকা তৈরি করে বিএনপির হাতে তুলে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার মাঠেও সক্রিয় হয়েছেন, আগাম প্রচার-প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ বিষয়ে বলেন, আমরা এমন আসনেই শরিকদের প্রার্থী দেব, যেসব আসনে জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় সেই দিকটিই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক, সমমনা ও ফ্যাসিস্টবিরোধী মনোভাবাপন্ন সব দলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি বৃহৎ নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টা করছি। জনগণের রায় পেলে নির্বাচনের পর আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠনের ইচ্ছা পোষণ করি। যার ঘোষণা আগেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়েছেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক, মিত্র ও সমমনা দলগুলোকে ৫০টি আসন ছাড়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। শর্তসাপেক্ষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা কমবেশি করা হতে পারে। তবে সব প্রার্থীকেই এলাকায় অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আরও আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে দলটি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নির্বাচনে আসন সমঝোতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে- সেই দলগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা হতেই পারে। তা ছাড়া ডান ও বামপন্থি অন্য দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হতে পারে। জোট বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ডান ও বামপন্থি আরও গুরুত্বপূর্ণ দলের সমর্থন নিয়ে বিএনপি একটি অঘোষিত বৃহৎ আকারের নির্বাচনি প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারাও। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের শরিকদের বাইরে অন্য দলগুলোরও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা এবং যোগাযোগ চলছে। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে জোট গঠন কিংবা আসন সমঝোতা যে কোনোটিই হতে পারে। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের আন্দোলনে যারা যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছেন, জনগণের রায় পেলে নির্বাচনের পর তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সরকার এসে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করবে।