Image description

সিলেটে এবার দু’টি আসন চায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। ৬টি আসনের মধ্যে ভোট মিত্রদের কাছে এ দু’টি আসন চাইবে তারা। ইতিমধ্যে পর্দার আড়ালে এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। জমিয়তের দাবি ও বিএনপি’র আসনভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণার কারণে এ দু’টি আসন নিয়ে ইতিমধ্যে সিলেট জুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে সিলেট জেলার ৬টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ৪টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসনে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। আর এ দু’টি আসনে জমিয়ত নেতারা শক্ত কামড় বসিয়েছে। বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণার পর মঙ্গলবার ঢাকায় জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট-৫ এবার জমিয়ত চায়, পাশাপাশি সিলেট-৪ আসনও চায়। কোনো ছাড় নয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচনের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে ভোটের আসনভিত্তিক সমঝোতা হতে পারে। জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, জোটে না হয়ে সমঝোতায় হলেও জমিয়ত এবার বিএনপি’র সঙ্গে থাকবে।

জামায়াতের সঙ্গে আক্বিদাগত দূরত্ব থাকার কারণে জমিয়ত ওই দিকে যাবে না। যদি বিএনপি’র সঙ্গে বুঝাপড়া না হয় তাহলে তারা এককভাবেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেই প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, সিলেট জেলার ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী সদরে জমিয়তের। অর্থাৎ জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক এ আসনে প্রার্থী। এ আসনে তিনি ২০১৮ সালে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই সময় পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তারা জয় ঘরে তুলতে পারেননি। তবে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে তাদের শক্তিশালী ভোট ব্যাংকও রয়েছে। এই ভোট ব্যাংকের কারণে তারা আগামী নির্বাচনে এ আসনে জয় ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী মাঠে থাকায় দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি  ভোটারদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। তবে; এবার যে এ আসনে ইসলামী দলের ভোট এককভাবে জমিয়তের বাক্সে যাবে সেটি বলা মুশকিল। কারণ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন এ আসনে ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী  ঘোষণা করেছে। ফলে এ আসনে ইসলামী দলের ভোট বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য জয়ের বন্দরে পৌঁছতে হলে জমিয়তকে এ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগমনা ভোটারদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে। 

ইতিমধ্যে এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীরা বিদ্রোহের আভাস দিয়েছেন। ফলে সিলেট-৫ আসনের নির্বাচনী হিসাব আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। সিলেট-৪ আসনটি এবার জমিয়ত হাতছাড়া করতে চায় না। এ আসনে তাদের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। তিনি অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সঙ্গেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। জমিয়ত নেতারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ঢাকায় যে বৈঠক হয়েছে সেখানে সিলেট-৪ আসন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর কেন্দ্রীয় নেতারা এ আসনটি হাতছাড়া না করার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন। বিএনপি’র পক্ষ থেকে এ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়া হয়নি। তবে সিলেটের যেসব আসনে বিএনপি’র দলীয় ভোট ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে সিলেট-৪ আসন অন্যতম। পরিস্থিতি এমন ধানের শীষের প্রার্থী দিলেই পাস। যদিও এবার জামায়াতের পক্ষ থেকে উকিঁঝুঁকি দেয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত জামায়াত দৌড়ে কতোখানি এগোয় সেটি এখন দেখার বিষয়। তবে জমিয়তের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে এ আসনে। এডভোকেট মোহাম্মদ আলী দলীয় ভাবে জমিয়তের অভ্যন্তরের নীতিনির্ধারক মহলের একজন। এ আসনের লোকজন এবার স্থানীয় প্রার্থী চায়। এ জন্য তিনি এবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে মোহাম্মদ আলীর ভোট মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বেশি। জমিয়ত ছাড়াও এ আসনে জামায়াত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন। ইতিমধ্যে এ আসনে জামায়াতের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে জমিয়তের। এ আসনেই অবস্থিত হরিপুর মাদ্রাসা। 

জয়ের ভোট ব্যাংক রয়েছে বিএনপি’র। ফলে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিতে চাচ্ছেও না। এক জেলায় একইসঙ্গে দু’টি আসন সমঝোতায় ছেড়ে দেয়ার পক্ষে নয় দলের নেতারা। এজন্য এ আসন নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা চলছে। জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জমিয়ত এবার হয় একক নির্বাচন করবে, না হয় বিএনপি’র সঙ্গে বুঝাপড়ায় যাবে। কোনটি হবে সেটি এখনই বলার সময় আসেনি। তবে সিলেট-৫ আসনের পাশাপাশি সিলেট-৪ আসনও এবার তারা চান। দু’টি আসনেই তাদের প্রার্থী ভালো। এ ছাড়া, সিলেট-৬ ও সুনামগঞ্জ-২ আসনেও তাদের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তিনি বলেন- জোট কিংবা সমঝোতার ভোটের ঐক্যের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক চিন্তাধারায় রয়েছে। আলোচনা যে খুব গভীরে হচ্ছে তা নয়। সময় হলে সবকিছু পরিষ্কার হবে বলে জানান তিনি। জমিয়তের নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে জমিয়ত ৬ আসনে নির্বাচন করেছিল। এবার  জোট বা সমঝোতায় ভোট হলে তারা মিত্রদের কাছে ১২টি আসন চায়। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তারা।