জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.জাহেদ উর রহমান সতর্ক করে বলেছেন, কমিশনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি দেশের রাজনীতিতে নতুন সংকট ও বিভাজনের জন্ম দিতে পারে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) একটি বেসরকারীকে গণমাধ্যমকে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহেদ উর রহমান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ ছিল ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি ঐক্যমতপূর্ণ প্রস্তাবনা তৈরি করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা স্থাপন করা। কিন্তু কমিশন এখন সেই সীমারেখা পেরিয়ে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিও নির্ধারণ করেছে, যা রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, কমিশন প্রস্তাব করেছে, জুলাই সনদের কিছু অংশ তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং যেসব বিষয়ে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন, সেগুলো গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি, নির্বাচনের পর নয় মাসের মধ্যে সংশোধনীগুলো সংসদে পাস না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। জাহেদ উর রহমানের মতে, এই প্রক্রিয়া আইনি দিক থেকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিবর্তে প্রশাসনিক জোর প্রয়োগের ইঙ্গিত বহন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বরং এতে সংঘাত ও অবিশ্বাসই বাড়বে।”
জাহেদ উর রহমান অভিযোগ করেন, ঐকমত্য কমিশন গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ না রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এতে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান দুর্বল হবে এবং গণভোটের ফলাফল নিয়েও নতুন বিতর্ক দেখা দিতে পারে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি বিএনপি এই প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করে মাঠে নেমে পড়ে, তাহলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ভিন্নমতসহ সনদের প্রস্তাব গণভোটে দেওয়া হলে সেটাই হতো সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এতে জনগণের মতামতও প্রতিফলিত হতো এবং দলগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করতে পারত।
তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও রাজনৈতিক অনৈক্যের মধ্যে এই নতুন প্রস্তাব রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
জাহেদ উর রহমান মনে করেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবিত পদ্ধতি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। এতে রাজনৈতিক অনৈক্য, সংঘাত এবং এমনকি নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি সরকার ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী গণভোট আয়োজনের পথে এগোয়, তবে তা দেশে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করবে। এর পরিণতি জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে দ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাস আরও গভীর করবে।”