
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের শপথ পড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে চলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। বুধবার নগর ভবনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ইশরাক বলেন, বাইরের কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনকে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত ‘মিথ্যাচার’ করছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, এখানে আইনি জটিলতা আছে, সাব-জুডিস ম্যাটার আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়টি বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে। তারপরও যদি তিনি বলেন আইনি ঝামেলা আছে তাহলে আমি বলব এই ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনো দিন দেখেনি।
মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছে। তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন
তিনি জানান, সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও এক্ষেত্রে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ‘সুযোগ নেই’। নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’। কারণ বিষয়টিকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা। সংকট সুরাহায় মেয়র হিসেবে শপথ পড়ার অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক; না হলে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে দাবি করলেও তারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরও জনগণের দাবির প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছেন না। তারা তাদের (ইশরাকসহ সমর্থকদের) মানুষ বলে মনে করছেন না। ঈদের আগে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকাবাসী তাদের যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা লক্ষ্য করছেন, বাংলাদেশের সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। তারা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না।
ইশরাক অভিযোগ করেন, মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছে। তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।
ইশরাক হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ফোন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়িতে জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল জ্বালানি বন্ধ করে দিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে। সেই দায়টা তার (ইশরাক) ওপর চাপাবেন। মানুষের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে তাদের আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। জ্বালানি বন্ধ করার আপনারা কে?
সমর্থকদের আন্দোলন অব্যাহত: বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় এবং সরকারের উপদেষ্টাদের আদালত অবমাননামূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নগর ভবনে এক ঘণ্টার প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকাবাসীসহ ইশরাক সমর্থকরা। বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ইশরাক সমর্থক ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা নগর ভবনে সামনে এই এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ছোটবড় মিছিল নিয়ে জড়ো হন নগর ভবনে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নগরভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে নিজেদের উজ্জীবিত করেন ইশরাক সমর্থকরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম দিপু বলেন, সরকার জনতার নেতাকে মেয়র পদে শপথ পাঠ করাচ্ছেন না। এটা একটা ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজধানীবাসী টানা আন্দোলনে নেমেছেন। এই আন্দোলন তারা চালিয়ে যাবেন। সমর্থকরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্র করে তাদের নেতা ইশরাককে মেয়রের শপথ পড়ানো হচ্ছে না।
এদিকে আন্দোলনের কারণে বুধবারও বন্ধ ছিল নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিকসেবা। মূল ফটকে তালা। বন্ধ রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ সব নাগরিকসেবা। ফলে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ জনগণ।