
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে ইসলামি দলগুলোতে। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, ইসলামবিদ্বেষী চক্রের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত সাড়ে ১৫ বছরে নানা দ্বন্দ্ব-বিভেদ এবং ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ইসলামি দলগুলোকে দমন করে হাসিনা সরকার। তবে নতুন বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী জুলুম থেকে মুক্তি পেয়ে সবার মাঝে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিচ্ছে। পুরোনো বিভেদ ভুলে সবাই অনেক কাছাকাছি হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ইসলামি শক্তির পক্ষে বিশেষ জনমত গড়ে তুলতে চান তারা।
এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থী বাছাই ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগও শুরু হয়েছে। তবে ইসলামি দলগুলোর ভোট যাতে এক বাক্সে যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে অধিকাংশ দল।
সূত্র মতে, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিন্ন তথা একক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিসহ অন্তত ১০টি দল। বাকি দলগুলো হলো- ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনের দুটি অংশ, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ এবং নেজামে ইসলাম পার্টির দুটি অংশ। সমমনা কিছু দলও তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটÑ তাদের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া মাজার, পীর, তরিকতপন্থি দল ও সংগঠন নিয়ে আলাদা জোট করে সব আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছে পতিত আওয়ামী সরকারের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট’। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটির তেমন কোনো অবস্থান নেই বলে জানা গেছে।
যদিও জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট একটি অংশের কিছুটা পিছুটান বা আপত্তি আছে বলে জানা গেছে। তারা গোপনে জামায়াতবিরোধী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ারও মত আছে ওই অংশের। তবে সামগ্রিকভাবে তাদের সেই বিরোধিতার কোনো প্রভাব সবার ওপর পড়বে না বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কারণ এরই মধ্যে জামায়াতসহ প্রায় সব ইসলামি দল ও শীর্ষ আলেমদের নিয়ে সিরিজ বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনো ফরমাল কিছু হয়নি। জামায়াত নিয়ে কোনো বিরোধিতা হবে না বলে তিনি মনে করেন।
ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে কাজ করা সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের অভিন্ন বাক্স হবে। এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গোপন কোনো ষড়যন্ত্রে কেউ পা দেবে না বলে সবাই অঙ্গীকার করছেন।
সূত্র মতে, ইসলামপন্থিদের অগ্রযাত্রা রুখে দিতেই যে এতদিন ফ্যাসিস্ট সরকার বিভেদের নানা ষড়যন্ত্র করত, তা সংশ্লিষ্ট সবাই বুঝতে পারছেন। তাই নতুন সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চান তারা। এ জন্য ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলছেন। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছেন।
ইসলামপন্থিদের ঐক্যের জন্য জামায়াতে ইসলামী উদার উল্লেখ করে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, আমিরে জামায়াত স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেনÑ আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের একটি ব্যালট করতে যতটা ছাড় ও উদারতার প্রয়োজন হয় জামায়াত তা করবে।
তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্যই নয়, আগামী দিনে যাতে আলেমদের ওপর আর কেউ জুলুম করতে না পারে, সে জন্য সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সূত্র মতে, প্রায় সব আসনে প্রার্থী ঘোষণাসহ নির্বাচনি জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে জামায়াত। তবে এককভাবে না কি জোটগতভাবে তারা নির্বাচন করবেÑ সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তফসিলের পর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
ইসলামি দলগুলোর জোট বা ঐক্যের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ জানান, আমিরে জামায়াত অনেকের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কথা বলছেন, চরমোনাই পীরের বাসায় গিয়েছেন। এসবের মাধ্যমে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বেড়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে।’
জানা গেছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী গত ১৭ আগস্ট মগবাজারে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় সব ঘরানার আলেমদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের একটি বাক্স দেওয়ার ঘোষণা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় নানা তৎপরতা চলছে।
গত ২৯ মে খেলাফত মজলিস কার্যালয়ে সমমনা ৫টি ইসলামী দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমমনা ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে এক আসনে একজন প্রার্থী মনোনয়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে বিশিষ্ট উলামা, পীর-মাশায়েখ ও দীনদার বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের আহবানে এক বৈঠকে এসব দলের নেতা অংশ নেন। সেখানে ইসলামপন্থিদের ভোট একটি বাক্সে পাঠানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হন তারা।
পরে চরমোনাই পীরের আরেক বৈঠক হয় ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সঙ্গে। এবি পার্টি, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা বৈঠক হয় ইসলামী আন্দোলনের। এ ছাড়া দলটির ওলামা সংগঠন- আইম্মা পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীসহ সব ইসলামী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎ ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মাঠপর্যায়ে মানুষের মাঝে আওয়াজ উঠেছে যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী তিনটি বড় দল দেশ শাসন করেছে। তারা এবার ইসলামি দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সেই উপলব্ধির প্রতি সম্মান জানিয়েই ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে ইসলামি দলগুলো। আমাদের আমির সবাইকে এক কাতারে আনার জন্য কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভালো কিছু হবে বলে আমরা আশাবাদী। আওয়ামী সরকারের সময় এ ধরনের উদ্যোগ নিলেও নানাভাবে বাধা দিয়ে তা সফল হতে দেয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ বলেন, সব আসনে আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। স্থানীয়পর্যায় থেকে আসনভিত্তিক তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ এলাকায় গণসংযোগসহ নানা প্রচার শুরু করেছেন।
ইসলামী জোট গঠনের তৎপরতার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে খেলাফত মজলিস। গত ২ জুন দলটির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের স্ব স্ব আসনে তৎপরতা জোরদারের আহবান জানানো হয়। যথাসময়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল জানান, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একটা ঐক্য হয়েই গেছে। ঐক্যের বাইরে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের আগে কী হয় তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সব ইসলামি দল এবং যারা ইসলামের নামে কাজ করে তাদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। সমমনা ৫টি ইসলামী দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ২৫ জুন আরেকটি বৈঠকে একক প্রার্থী দেওয়ার কৌশল ঠিক করা হবে।
চনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি নিজেও শরীয়তপুর-১ আসনে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানান।
নেজামে ইসলাম পার্টির (একাংশ) মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার বলেন, ইসলামি দলগুলোর সম্ভাব্য জোটের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের প্রার্থীতালিকা চূড়ান্তের কাজ চলছে। তাদের অন্তত ২০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করে নির্বাচনে যেতে চাই। এ জন্য জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তার আগে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ করছি।
দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বটগাছ’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেতে আমরা নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে নেতাদের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নিবন্ধন আরেকটি অংশের দখলে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
খেলাফত আন্দোলনের আরেক অংশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছে, আমরাও তার সঙ্গে একমত। আমরাও চাই জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোটের একটি বাক্স থাকুক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে ভোট করার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সুলতান মহিউদ্দিন আরো বলেন, ‘আমরা সারা দেশে দল গোছাচ্ছি ও প্রার্থী ঠিক করছি। অন্তত ১০০ আসনে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার তৎপরতা চলছে। সর্বশেষ পতিত আওয়ামী সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে ৪০টির মতো আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়; তবে ৯ প্রার্থী এতে অংশ নেন বলে জানা গেছে।
মুফতি আমিনীর স্মৃতিবিজড়িত ইসলামী ঐক্যজোট এখন দুটি ভাগে বিভক্ত। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি বিএনপি জোট ত্যাগ করা নিয়ে বিভক্ত হয় দলটি। একটি অংশ জোট ছাড়লেও মাওলানা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে আরেক অংশ বিএনপি জোটে থেকে যায়। মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বাধীন অংশটি পতিত আওয়ামী সরকারের অধীনে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আবুল হাসানাত আমিনী ৩ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। সে সঙ্গে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
পরে ৫ সেপ্টেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলনে মাওলানা আবদুল কাদিরকে চেয়ারম্যান ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে মহাসচিব করে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তবে দলটির নিবন্ধন এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে দলটির মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কাজ জোরদার করেছি। একইসঙ্গে সম্ভাব্য প্রায় অর্ধশত নেতাকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তারা নির্বাচনি এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন। তিনি নিজেও কুমিল্লা-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মুফতি সাখাওয়াত বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য ইসলামি জোটের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে চাই। তবে পুরোনো শরিক হিসেবে বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, নতুন কমিটির অধীনে দলের নিবন্ধন ফিরে পেতে সব শর্ত মেনে ইসিতে আবেদন করা হয়েছে। তবে ইসি ধীরগতিতে কাজ করছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের আরেক অংশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ইলিয়াস আতহারী বলেন, ‘আমরা বিএনপির সমমনা জোটের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাই। এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনি কোনো তৎপরতাও শুরু হয়নি। তবে ৫ থেকে ৭টি আসনে আমাদের নির্বাচনের টার্গেট রয়েছে।’
বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যেতে চায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নিবন্ধনবিহীন একাংশ)। দলটির সম্ভাব্য চার প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা হলেনÑকুমিল্লা-৬ আসনে মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, যশোর-৫ আসনে মাওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সৈয়দ তালহা আলম এবং সুনামগঞ্জ-১ আসনে হাফেজ রশিদ আহমদ। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান। তিনি বলেন, ‘দলের নিবন্ধনের জন্য আমরা সব শর্ত মেনে ইসিতে আবেদন করেছি।’
দলটির মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, ‘আমরা ২৬ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। জোট ভেঙে দেওয়ার পর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও বিএনপির সঙ্গেই তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অংশ নেব। আমাদের চাওয়া থাকবে ৭টি আসন। তবে বিএনপির সিদ্ধান্তই মেনে নেব। এর বাইরে ভিন্নমতের কারণে অন্য কোনো ইসলামি জোটের সঙ্গে যাওয়ার চিন্তা বা সুযোগ নেই।’
নেজামে ইসলাম পার্টির (একাংশ) নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একেএম আশরাফুল হক বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। তবে আগামী নির্বাচনে আমরা ইসলামি সমমনা সম্ভাব্য জোট থেকে অংশ নিতে আগ্রহী। কারণ, ইসলামি শক্তিগুলো এক হলে ভালো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে আগ্রহ থাকলেও ইসলামি সমমনাদের সঙ্গে এখনো কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানান তিনি।
আশরাফুল হক আরো বলেন, কোনো জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে অন্তত তিনটি আসনে তারা নির্বাচন করতে চান। আর এককভাবে ৩০ থেকে ৩৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার টার্গেট রয়েছে তাদের। তিনি নিজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পতিত আওয়ামী সরকারের অধীনে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের ৩৮ প্রার্থী। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও তারা একটি জোট করে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি সারছে।
এ বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান এমএ মতিন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যেভাবে হবে বলা হচ্ছে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তারপরও আমরা তাতে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা রাজনৈতিক, তরিকতপন্থি ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত-সংশ্লিষ্ট তিনটি প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করতে চাই। পীর, মাজার, তরিকত, সুফিবাদ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত অনুসারীদের নিয়ে এই জোট হবে। এতে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, সুপ্রিম পার্টি, ছারছীনার পীরের সংগঠন জমিয়তে হিজবুল্লাহ, ফুলতলীর পীরের সংগঠন আঞ্জুমানে আল ইসলাহসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন থাকতে পারে। আগামী জুলাইয়ের শেষদিকে এই জোট দৃশ্যমান হতে পারে।’
এমএ মতিন বলেন, আমরা জোটগতভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। তবে পরে বিএনপি বা বৃহত্তর কোনো জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে এ সংখ্যা পরিবর্তন হবে। দেশের ইসলামি দলগুলোর সম্ভাব্য জোটে তাদের যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান এমএ মতিন।
দলের নিবন্ধন রক্ষা ও নেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চাপে পড়েই বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এমএ মতিন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক বা বোঝাপড়া ছিল না। নির্বাচনের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সাও নেওয়া হয়নি।’
এদিকে আওয়ামী মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। একইভাবে আওয়ামী সুবিধাভোগী মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট ও ফরীদ উদ্দীন মাসউদের বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার কোনো কর্মকাণ্ড নেই বলে জানা গেছে।