
অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে দেশে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। তবে বিএনপি মনে করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এই দাবিতে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে দলটি। গতকাল শনিবার রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে দেওয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে। তারা বলেছেন, ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি যুক্তিও নেই। শুধু একটি নয়, কমপক্ষে ৫২টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। হাতেগোনা চার-পাঁচটি দল বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর জন্ম হওয়া দলগুলোই শুধু এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় না।
এমন পরিস্থিতিতে সংস্কার ইস্যুতে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার জন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের এই সংলাপের প্রথম দিনে কেবল প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দিতে পারেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা জনগণ আর কীভাবে দেবে—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই হতে হবে। দেশের ভেতর ও বাইরের বিনিয়োগকারীরা জিজ্ঞাসা করে, নির্বাচন কবে? অন্যান্য যারা আছে, তারাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই বলছে নির্বাচন কবে?
শুধু একটি নয়, কমপক্ষে ৫২টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, যদি কেউ বলে, শুধু একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়, এটা কি সত্য কথা? তাহলে এ ধরনের একটা মন্তব্য কি আমাদের (বিএনপির) উদ্দেশে করা হয়েছে? এটা কী অর্থ বহন করে? তিনি বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চায় না কারা, হাতেগোনা চার-পাঁচটি দল। তাদের সমর্থনের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না, এটা জনগণ বুঝে নেবে। এরা এখনো নিবন্ধিত দলও নয়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ৫ আগস্টের পর যেসব দলের জন্ম হয়েছে, শুধু সেসব দলই নির্বাচন চায় না। জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।
শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সংস্কার নিয়ে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো কম্পাইল করে জাতির কাছে প্রকাশ করেন। আগামী ২ জুন আবার ডেকেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। ভাবটা আমরা বুঝছি এ রকম, আনুষ্ঠানিকতা-আয়োজনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু কাজের কোনো খবর নেই। আবার ডেকেছেন ২ তারিখে, তৃতীয় পর্বের আলোচনার আবার শুভ উদ্বোধন হবে। কেন? উদ্বোধন কতবার করতে হয়। এই সংস্কার নিয়ে আর কতবার উদ্বোধন করবেন? এভাবে আপনারা আমাদের সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন আপনি ডিসেম্বরের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবেন? এর পক্ষে একটিও যুক্তি নেই। শুধু বলেন ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা। ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে, এটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি, আমাদের দাবি। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি যুক্তিও যদি অন্তর্বর্তী সরকারের থাকে, সেটি সরকারকে প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে এই ডিসেম্বরের মধ্যে দেবেন বলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের সামনে; পরে আপনি সরে গেলেন, সেই কাজটি ঠিক করেননি।
শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে যাত্রাবাড়ীতে গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে একটি মহল জাতিকে ব্ল্যাকমেইল করছে। আমরা বলব, জাতিকে ব্ল্যাকমেইল করবেন না। যে কোনো মূল্যে দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার আসা উচিত। তবেই দেশের অস্থিরতা দূর হবে।
জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। এর মধ্যে নির্বাচন দেওয়ায় খুব একটা বড় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। সরকারকে বলব, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলে যাবেন। আমরা সবাই সহযোগিতা করবো। তিনি আরও বলেন, সরকারকে আহ্বান করব—ছোট ছোট শিশুদের, সারা বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। ১০ মাস লাগে না এ সংস্কার করতে, নির্বাচন দিতে। অথচ আপনারা ১০ মাস অতিক্রান্ত করেছেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বারের সাবেক সভাপতি মহসিন মিয়া, বারের সহসভাপতি শহীদুজ্জামান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের সদস্য সচিব নিহার হোসেন ফারুক প্রমুখ।