
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল চলছে। অফিস-আদালত থেকে শহর-গ্রাম, তারকা হোটেল থেকে টং দোকান অর্থাৎ মাঠে-ঘাটে সর্বত্রই যেন একই প্রশ্ন—সংসদ নির্বাচন কবে? অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মনোমালিন্য ও তফাত বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।’ তবে তার এমন কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। ইসির তালিকায় নিবন্ধিত ৫৫টি রাজনৈতিক দল থাকলেও বিভিন্ন সময়ে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করা হয়ে। সে হিসাবে ৪৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে অন্তত ৩৪টি দল চায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। ৩টি দল সংস্কার ও বিচার শেষে চায় নির্বাচন। কয়েকটি দল বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার শেষেই নির্বাচন হলে ভালো। ৪টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ৩টি রাজনৈতিক দল। তা ছাড়া ৫টি দল তাদের অবস্থান নির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার করেনি। কয়েকটি দল বলছে, অবশ্যই জুনের আগে নির্বাচন হতে হবে এবং সেটি ডিসেম্বরের পর এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই। গত দুই দিনে কালবেলার পক্ষ থেকে নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ অভিমত তুলে ধরেন।
জানা যায়, ভোটের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলনরত বিএনপির চাওয়া—ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হোক। এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে একরকম সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাজধানীতে এক সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার শেষে সংসদ নির্বাচন। সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা এক বক্তব্যে বলেন, ‘সব দল নয়, শুধু একটি রাজনৈতিক দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।’ তার ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলগুলো বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রয়াস থেকেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। সুতরাং সরকারকে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কোনো কারণে ডিসেম্বরে সম্ভব না হলে জুনের আগেই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে কোন দল কী বলছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপি বলে আসছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। গতকাল শনিবারও এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার একটিও কারণ নেই, আপনার সামনে যুক্তি নাই… কেন আপনি ডিসেম্বরের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবেন… সেটার পক্ষে একটিও যুক্ত নেই। কিন্তু শুধু বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, ডিসেম্বর থেকে জুন যেন আসর করেছেন আপনারা যে, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’ এটা বলতে থাকতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে—এটা দেশের মানুষের দাবি। একটি কারণও নেই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাওয়ার। সাংবাদিকদের অনুরোধ করব আপনারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করবেন যে, যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি যুক্তিও তাদের কাছে থাকে, সেটা যেন তারা (সরকার) প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই বলে আসছিল সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নির্বাচন হতে হবে। তবে গত মাসে দলটির আমির বলেছেন, আগামী বছরের রোজার আগেই নির্বাচন হতে হবে। সে হিসাবে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে দলটি বলছে, ডিসেম্বরের পরে হলেও সমস্যা নেই। গতকাল কিশোরগঞ্জে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার ও বিচারের আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন না করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।’ এ বিষয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের কালবেলাকে বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের যে সময়সীমার কথা সরকার বলছে, তার মধ্যে রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে বা রোজার পরে এপ্রিলে সুবিধামতো সময়ে নির্বাচনের কথা আমরা বলেছি।
ইসলামী ঐক্যজোট
দলটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমরা সন্দিহান যে, নির্বাচন হবে কি না? কিংবা নির্বাচন হলেও সেটি সুষ্ঠু হবে কি না? নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো আস্থা নেই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমদ কালবেলাকে বলেন, সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান শেষে নির্বাচন হোক। এজন্য আমরা নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া করছি না। আমরা চাই জুনের আগেই নির্বাচন হলে ভালো।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি
দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ কালবেলাকে বলেন, আমরা নির্বাচনের কোনো সময়ের কথা বলিনি। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। আমরা চাই তিনি তার কথাকে সমর্থন করুন। এখন যে অবস্থা, তাতে নির্বাচন ডিসেম্বরে হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
দলটির আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী কালবেলাকে বলেন, আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
দলটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের কালবেলাকে বলেন, দ্রুত সংস্কার শেষে তাড়াতাড়ি নির্বাচন হওয়া উচিত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
দলটির মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী কালবেলাকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলে আসছি। আমরা কোনো দলকে সমর্থনি করছি না। সময় বৃদ্ধির জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জায়গা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের জন্য সরকারের কাছে রোডম্যাপ চেয়েছি। কিন্তু সরকার সেটি পরিষ্কার করছে না। অবশ্যই নির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে হবে। এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, আমরা নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই চাই। তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়া উচিত, জুনে নয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, আমরা ডিসেম্বর বা জুন বুঝি না। নির্বাচন যথাসময়ে দিতে হবে। সরকারের উচিত ছিল রোডম্যাপ ঘোষণা করা। তাহলে বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। জুনে তো নির্বাচনের সুযোগ নেই। বিশ্বাসের জায়গাটা দুর্বল হচ্ছে। ডিসেম্বর না হলে জানুয়ারিতে হতে পারে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় কালবেলাকে বলেন, আমরা মনে করি ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সরকার কেন ডিসেম্বর টু জুন বলছে, সেটি বোধগম্য নয়। তবে জাকের পার্টির উপদেষ্টা এজাজুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে চাননি তিনি। তবে নির্বাচন হওয়া দরকার। কিন্তু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ
বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব নির্বাচন হওয়া দরকার।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন, সব নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করতে হবে, কোনো তারিখেই আমাদের আপত্তি নেই।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ডিসেম্বরের আগে হলেও সমস্যা নেই, ডিসেম্বরে হলেও সমস্যা নেই। দু-এক মাস পরে হলেও সমস্যা নেই। তবে নির্বাচনটা যেন হয়, সেই প্রার্থনা করি।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
সংগঠনের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন কালবেলাকে বলেন, যেভাবেই হোক ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। দেড় বছর সময় কোনোভাবেই কম না, সংস্কারের নামে নির্বাচন আটকে রাখা উচিত নয়। ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একমত।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, অধিকাংশ দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এর আগেও করা সম্ভব। কিন্তু তারা কেন জুনকে নির্ধারণ করছে, তা পরিষ্কার নয়। অন্য উদ্দেশ্য আছে কি না? তাদের পছন্দের দলকে আরেকটু সময় দিতে চান কি না কিংবা বন্দর-করিডোরের মতো নতুন কোনো এজেন্ডা আছে কি না, জানি না। সময়ক্ষেপণ করে দলগুলোর সঙ্গে সরকার দূরত্ব সৃষ্টি করছে।
খেলাফত মজলিস
দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, সে তার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন করুক, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করুক। রোজার আগে বা পরে তারিখ বা মাসের নাম চূড়ান্ত করে বলুক। আমরা চাই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই হোক।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট
মুক্তিজোটের সংগঠনপ্রধান আবু লায়েস মুন্না কালবেলাকে বলেন, আমরা দাবি জানিয়েছিলাম নির্বাচন হতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। কেননা, ১৫ বছর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন পাইনি, তাই সেটা দ্রুত হোক। বিচার ও সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ
বিএনএফের প্রেসিডেন্ট এসএম আবুল কালাম আজাদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, আমাদের তো কেউ কিছু বলেনি। দল হিসেবে বলব, অবশ্যই ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। সেজন্য কোন কাজে কত দিন সময় দিতে হবে, সেটি বের করে নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। কীসের আবার ডিসেম্বর?
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। এর পরই হওয়া উচিত নির্বাচন, হোক সেটা ডিসেম্বর বা জুন। সংস্কারের পর সেটা জুনের পর হলেও আপত্তি নেই।
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইমাম আবু হায়াত বলেন, উনারা তো দেশ চালাতে পারছেন না, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।
বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ
সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, কমপক্ষে যেটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, তা করেই নির্বাচন করা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করবে, তাই সংস্কার করে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের আগেই বেশি শীত পড়ার আগেই নির্বাচন দেওয়া উচিত। সম্ভব হলে নভেম্বরেই।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, গণঅধিকার পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলন।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, সরকার সহজ জিনিসকে জটিল করে ফেলছে এবং সেটার পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, জনমনে সে প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার তিনটি কাজের কথা বলছে। বিচারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তারা এখতিয়ারবহির্ভূত অনেক সংস্কারের কথা বলতে চেয়েছেন। যেমন করিডোর, বন্দর—এগুলো তাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, একটি ভালো নির্বাচনের জন্য যে যে সংস্কার দরকার, তা করে নির্বাচন করা। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, এটা ডিসেম্বরের আগে করা সম্ভব এবং ডিসেম্বরের আগে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাও সম্ভব।
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন চায় নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
নির্বাচন কখন হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে এখনো দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-এনডিএম।
নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে কোনো সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় না তৃণমূল বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, তারা আগে রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং স্বাধীনতার পর থেকে বিগত আওয়ামী সরকার পর্যন্ত সংঘটিত গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অতীতের সব অপরাধের বিচার চান। তারপর নির্বাচন চান। এ ক্ষেত্রে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি
দলের নির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহীম মিয়া বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে, স্থিতিশীলতার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন প্রয়োজন। সেটা যদি সম্ভব হয় এক মাসের মধ্য। কোনোভাবেই দেরি করা উচিত হবে না।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে হলে ভালো হয়। কিন্তু সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রস্তুতিগত কারণে যদি সরকারের যৌক্তিক সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, এতে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অযথা বিতর্ক ও পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হওয়াকে আমরা অনুচিত মনে করি। এই বিতর্ক ও পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। এটা বন্ধ না হলে আমরা ভয়ানক সংকটের আশঙ্কা করছি। তখন সংস্কার, বিচার, নির্বাচন, গণতন্ত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা—সবই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল)
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, নির্বাচনের বিকল্প নির্বাচনই। কিন্তু সেটা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত সরকার দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করে নির্বাচন প্রয়োজন। কোন কোন বিষয়ে সংস্কার করতে হবে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হতে হবে।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, নির্বাচন হলেই কী আর না হলেই কী। আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না। গণতান্ত্রিক পরিবেশই তো নেই। নির্বাচন তো অপ্রাসঙ্গিক। ক্ষমতায় যারা সহসা যেতে চায় তাদের ভাবনায় এখন নির্বাচন।
বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহাম্মদ আলী ফারুকী বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, সমতা ও সমঅধিকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অতীতে নব্বই দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে পেরেছে তো, এক বছরেও কেন পারবে না।
এদিকে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী পার্টির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।