
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ফের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় আগামী ২ জুন বিএনপি এ আমন্ত্রণ পেয়েছে। এর আগে গত ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি। ওই দিন জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি পরদিন ২৫ মে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিএনপির সঙ্গে ২৪ মে বৈঠকের পর সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বৈঠকের কথা জানা গেল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এর কাছ থেকে। আগের বৈঠক থেকে নতুন বৈঠকের সময়ের মাঝে মাত্র ৮ দিন। অল্প দিনের ব্যবধানে কেন বিএনপির সঙ্গে বসতে হচ্ছে সরকারকে- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে।
গত কয়েকমাস ধরেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবিতে সরকারের কাছে একটি রোডম্যাপ চাইছে। কিন্তু গত কয়েকদিন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই খুব জোরালোভাবে বলছে নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই দিতে হবে। বিশেষ করে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত দুদিন স্পষ্ট করেই বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। গত ২৭ মে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়’ ঢাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তারেক রহমান ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জোরালো দাবি জানান।
এরপর গত ২৯ মে রাজধানীর রমনা ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা আলোজন করে বিএনপি। ওই সভায়ও তারেক রহমান বলেছেন, প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বরের আগেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’ জনআকাঙ্ক্ষা ধারণ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি আহ্বান জানান।
আজ শনিবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে।’ একই সময়ে যাত্রাবাড়ি থানা বিএনপি আয়োজিত এক সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, যারা আজকে নির্বাচনের বিপক্ষে বলছেন, বলেন। আপনার বলার অধিকার তো আছেই, বলতেই পারেন। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে জাতিকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে না। করা ঠিক হবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি। একটিও কারণ নেই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাওয়ার। সংস্কার ও নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া।
অর্থ্যাৎ বিএনপির শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে প্রায় সব সিনিয়র নেতাই নির্বাচনের জন্য সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মনোভাব হচ্ছে রাত পোহালেই শুরু হওয়ার জুন মাসে বিএনপি সরকারের কার্যক্রম নজরে রাখবে। সরকার কি নির্বাচনের পথে হাটছে নাকি সময় ক্ষেপন করছে। যদি সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দিকে না এগোয় তাহলে জুলাইয়ে কর্মসূচিতে যাবে দলটি, এমনটাই ভাবনায় রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। দলটির শীর্ষনেতাদের অবস্থান যখন এমন, ঠিক তখন বিএনপিকে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে ফের বৈঠকে ডেকেছে সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে বিএনপিকে যমুনায় আমন্ত্রণের বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত সরকার হয়তো ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে বিএনপির নেতাদের জোরালো দাবিতে চাপ অনুভব করছে। তাই উভয়পক্ষের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ মনোভাবে সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত বিএনপির সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে একটি দল ভোট চাচ্ছে সরকার প্রধানের এমন বক্তব্যে বিএনপির মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়েছে বলে সরকার অনুভব করছে, ২ জুনের বৈঠক সেই অসন্তোষ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
কয়েকদিনের ব্যবধানে এককভাবে বিএনপিকে যমুনায় আমন্ত্রণের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈঠকের একটা বিশেষত্বও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারনী ফেরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ২ জুনের সম্ভব্য বৈঠক নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে বুঝা যাচ্ছে ঘনঘন বৈঠকে খুশি নন বিএনপি নেতারা। তারা বৈঠকের ফলাফল দেখতে চান।
২ জুনের বৈঠক সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার একের পর এক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাতে বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জনগণের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন, কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বাস্তবায়ন চান তারা।
(শীর্ষনিউজ