Image description
 

নওগাঁয় এখনো কোনো কমিটি ঘোষণা করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি আত্মপ্রকাশের পর থেকেই উত্তরের এ জেলায় তাদের সংগঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন শহরের পার নওগাঁ মেরিগোল্ড পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইমরুল আখিয়ার পরাগ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এনসিপির আসন্ন জেলা কমিটিতে সভাপতি পদে নাম আসার কথা রয়েছে তার। তবে এনসিপির এই সংগঠকের বিরুদ্ধে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখলে নিয়ে পলাতক এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে।

এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বড় ভাই শাহরিয়ার পারভেজ আবাসন ব্যবসায়ী হওয়ায় শহরে থেকে ভাইয়ের ব্যবসা দেখাশোনা করেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। সেই সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আগে থেকেই সখ্য রয়েছে তার। গত বছরের ৬ মার্চ পার নওগাঁ মহল্লার স্টেডিয়াম পাড়ায় তাদের নির্মিত সাততলা ভবনের এক হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট (৬/বি) কেনেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের স্ত্রী ববি রায়। এরপর থেকে সেখানেই সপরিবারে বসবাস করতেন যুবলীগ সম্পাদক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা বিমান কুমার রায়। এরপরই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক দফায় লুটপাট চালান পরাগ। পরে আওয়ামী লীগ নেতা ছবেদুল ইসলাম রনিকে আশ্রয় দেওয়া হয় ওই ফ্ল্যাটে। রনি পত্নীতলা-ধামইরহাট আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তিনি পাটিচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সুরমা মাল্টিপারপাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গ্রাহকদের ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রনির বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির জেলা পর্যায়ের একজন সংগঠক জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা বিভিন্ন কৌশলে মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন তারা। এই মুহূর্তে তাদের প্রতিহত না করে পুনর্বাসনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ইমরুল আখিয়ার পরাগ। ছবেদুল ইসলাম রনি আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের অর্থের জোগানদাতা ছিলেন। এটা সবাই জানেন। সেই রনিকে পুনর্বাসন করছেন পরাগ। যুবলীগ নেতার স্ত্রীর ফ্ল্যাট দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রনিকে সেখানে নিরাপদ আশ্রয় করে দিয়েছেন তিনি।’

 

এ বিষয়ে কথা বলতে ফ্ল্যাটে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা ছবেদুল ইসলাম রনির ব্যবহৃত নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যুবলীগ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের স্ত্রী ববি রায় বলেন, ‘ইমরুল আখিয়ার পরাগের বড় ভাই শাহরিয়ার পারভেজের কাছে থেকে ২৫ লাখ টাকায় ফ্ল্যাটটি কিনে বাবা-মা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেই ফ্ল্যাটে অন্তত সাত লাখ টাকার ফার্নিচার ছিল। যার সবটুকুই লুটপাট করেছেন পরাগ। এখন ফ্ল্যাটটি হাতিয়ে নিতে এটি রনির মালিকানাধীন বলে প্রচার করছেন। এ নিয়ে থানায় রনিকে বাদী করে মিথ্যা মামলাও করিয়েছেন পরাগ। অথচ ফ্ল্যাট বিক্রির বেশ কিছু টাকা পরাগ নিজ হাতে গুনে নিয়েছেন। শাহরিয়ার পরভেজের ব্যাংক হিসাবেও টাকা দেওয়া হয়েছে, যার সব প্রমাণাদি আমার কাছে রয়েছে।’

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে থানায় তদবিরের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা করানোয় এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির কোনো সংগঠকের কাছে থেকে দখলদারিত্ব বা আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপরাজনীতি কাম্য নয়। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে বিতর্কিত কাউকে জেলার নেতৃত্বে আনা হবে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপি নওগাঁর সংগঠক ইমরুল আখিয়ার পরাগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছবেদুল ইসলাম রনির রাজনৈতিক পরিচয় আমার জানা ছিল না। একজন ইটভাটা ব্যবসায়ী হিসেবে সে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির সময় ইট সরবরাহ করেছিল। বিনিময়ে তাকে একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। পরে রনির ওই ফ্ল্যাটটি জোর করে দখলে নিতে আসেন যুবলীগ নেতা বিমান। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর রনি ফিরে এসে তার ফ্ল্যাট বুঝে নিয়েছেন। দখলবাজ যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এসবের মধ্যে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রনিকে পুনর্বাসনের প্রশ্নই আসে না।’

যুবলীগ সম্পাদকের স্ত্রীর কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি, আর্থিক লেনদেন এবং লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে পরাগ বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি বা আমার ভাই কেউই তাদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করিনি।’

তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির এনসিপির জেলা কমিটি ঘোষণা হবে। এসময়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অপপ্রচার করছে। এনসিপির ভেতরে কিছু ফ্যাসিবাদের দোসর ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী পুনর্বাসনকারীদের প্রতিহত করায় আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে তারা।’

সার্বিক বিষয়ে কথা হলে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্রেশ ইমেজের নেতা খুঁজছে এনসিপি। এই দলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন ও দখলবাজিতে জড়িত এমন কাউকে কখনোই মূল নেতৃত্বে আনা হবে না। যেহেতু নওগাঁ জেলায় কমিটি গঠনের দায়িত্বে আছি, অবশ্যই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এনসিপির সব কার্যক্রম থেকে পরাগকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’