বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে তত্ত্বাবধায়কের মোড়কে উর্দিশাসন ও ফ্যাসিবাদের আদলে তথাকথিত গণতন্ত্রের ছাঁয়ায় আওয়ামী দুঃশাসনের জাঁতাকলে গণতান্ত্রিক শূন্যতা, মতপ্রকাশের সংকোচন, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রাতিষ্ঠানের ক্ষয়িষ্ণু চিত্র ফুটে উঠেছে। তা থেকে উত্তরণের প্রশ্ন এখন আর কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু।
টেকসই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের কেন্দ্রীয় ইস্যু। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সক্রিয় নেতৃত্ব ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে দেশের চিন্তাদ্বীপ্ত ও বুদ্ধিমনস্করা দেখছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রার অভিষেক হিসেবে। বৈশ্বিক গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে কোনো সভ্য সমাজে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেতৃত্বের রাজনৈতিক দর্শন, সাংগঠনিক সক্ষমতা ও দূরদর্শী ভবিষ্যৎ রূপরেখা জনগণের আস্থার মূল ইমারত। তারেক রহমান সতের বছর দীর্ঘ প্রবাসজীবনে বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেবল দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করেননি; তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে অধ্যয়ন করে গভীরে প্রবেশ করেছেন।
লন্ডনে থেকে তিনি নিজ দলের সংস্কার, নীতিগত পুনর্বিন্যাস এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তার রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করেছেন সাম্প্রতিককালে। তার ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, শক্তিশালী সংসদ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠনের দিকনির্দেশনা দেয়। আমরা মনে করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। বাংলাদেশে বিশেষ করে বিগত আওয়ামী শাসনকালে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সবচেয়ে সংকুচিত। তারা মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছিল। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা দমনমূলক ব্যবস্থার কারণে সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, চিন্তাবিদ-দার্শনিকসহ ও সাধারণ নাগরিকগণ আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েছেন। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে মানুষ তার স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে পারছেন।
এই ধারাবাহিকতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক বক্তব্য ও দলীয় নথিতে বারবার ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ভিন্নমত দমন নয়, বরং ভিন্নমতকে রাষ্ট্রের শক্তি হিসেবে গ্রহণ করাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। পৃথিবীর নানা প্রান্তের একাডেমিক গবেষণায় দেখা গেছেÑ যেখানে মুক্ত চিন্তার পরিবেশ থাকে, সেখানেই উদ্ভাবন, ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়। দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ হতে পারে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রাজনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
একটি স্থিতিশীল ও টেকসই রাষ্ট্র বিনির্মানে প্রয়োজন লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজ, যা তৈরি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রদর্শনের মাধ্যমে। সাড়ে চার দশক আগে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণমানুষের প্রাণষ্পন্দন শহীদ জিয়ার প্রত্যক্ষ ছাঁয়া তারেক রহমানের ভাবনায়। আমরা মনে করি, গণতন্ত্র কেবল ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার প্রশ্নেও অঙ্গাঙ্গি জড়িত। আমাদের সমাজে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার। তারেক রহমানের দৃষ্টিতে লিঙ্গসমতা কেবল উন্নয়ন সূচকের অংশ নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক ও মানবিক ভিত্তি।
তাঁর দর্শনে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। আমরা মনে করি, এই উপলব্ধি তার রাষ্ট্রভাবনার অন্যতম স্তম্ভ। একটি ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণে জবাবদিহি রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। ইনসাফ বা ন্যায়বিচার এটি শুধু ধর্মীয় বা নৈতিক ধারণা নয়, বরং আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান ইমারত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও প্রশাসনিক জবাবদিহি ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দীকালের ইতিহাসে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি খুব একটা সুখকর ছিল না। এ দেশে যুগের পর যুগ ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।
বিনাবিচারে যেমন অসংখ্য মানুষ হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তেমনি বিচারিক হত্যাকা-ও হয়েছে ভিন্ন মতের রাজনীতিকদের। তারেক রহমান ‘ইনসাফের বাংলাদেশ’ ধারণার মাধ্যমে এমন একটি স্বপ্নের রাষ্ট্রের কথা বলেছেন, যেখানে ক্ষমতাবান ও প্রান্তজন আইনের চোখে সমান হবেন। কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠন হবে। তারেক রহমানের আগমন ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে সম্ভাবনাময় নতুন অভিযাত্রার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা কেবল একটি দলের ক্ষমতার মসনদ পাওয়া নয়- এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজ এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের একটি সমন্বিত প্রয়াস। একাডেমিক গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, যদি এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রূপ দেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি কার্যকর, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সন্তান তারেক রহমান, যার জন্মদাত্রী সদ্য প্রয়াত বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও জনমানুষের অধিকারের প্রশ্নে আপোসহীন সংগ্রামী চরিত্র হয়ে থাকবেন ইতিহাসের পাতায়। এমন পরিবারের একজন মহান সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে তারেক রহমান গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় হাল ধরবেন এমনটিই আশা দেশের আপামর জনসাধারণের।