Image description

ডা. ওয়াজেদ খান

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এমন একটি প্রবাদ চালু আছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। যেখানে পুরোনো কথাই আবার শুরু হয় নতুন করে। রাজনীতিবিদরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করেন অনায়াসে। বরখেলাপ করেন নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। মুহূর্তেই পাল্টে ফেলেন ভোল। পরিধেয় বস্ত্রের মতো যখন-তখন দল বদল করা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন কিছু নয়। এসব দেখে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে জনগণ। তারপরও মাঝেমধ্যে অস্বস্তি বোধ হয়। তাদের হঠকারিতা, অযোগ্যতা, অসততা ও চিন্তা-চেতনার পরিধির কথা বিবেচনা করে। দেশের রাজনীতিকরা সত্যিই কথাপাগল।

এ জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে কথামালার রাজনীতি। অনেক রাজনীতিক আছেন, তারা যা বলেন, বাস্তবে তা করেন না। আবার যা করেন, মুখে তা বলেন না। অনেক সময় করেন উল্টোটা। রাজনীতিকরা নিজেরা বিশ্বাস করেন না অথচ এমন সব বয়ান দিয়ে মাতিয়ে রাখেন সভা-সমিতি। জনসমক্ষে অপ্রয়োজনে কথা বলেন এবং বলতেই থাকেন। তাদের কথা দর্শক-শ্রোতার বিরক্তির কারণ হতে পারে, বিবেচনায় নেন না এমনটি। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায়ের নেতাদের এমন বাহাস-বিতর্ক আমাদের অবাক করে না। ‘ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে’ বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এমন একটি বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও তথ্যটি বিকৃত বলে দাবি করেছেন তিনি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরও অবসান ঘটেনি পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির। অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব নিয়ে চলছে মিথ্যাচার। রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার থেকে সরে গেছে অনেক রাজনৈতিক দল।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছিলেন দেশের কথাবাজ রাজনীতিকের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কোনো কথাই কখনো আটকায়নি তার মুখে। কোনো কথা মাটিতেও পড়তে দেননি তিনি। সর্বশেষ কাল হয়ে দাঁড়ায় তার মুখে উচ্চারিত রাজাকার গালি। এই গালির চূড়ান্ত পরিণতিতে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাকে। অথচ তিনিই বারবার বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা পালায় না।’ এমন অনেক কথাই তিনি বলেছেন, আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন নিজ থেকেই। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেক, পালন করেছেন সামান্যই। এভাবে কথা দিয়ে কথা না রাখার যে ভুয়া রাজনীতি, তার ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন হাসিনা। ৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন ৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের। ২৯ বছর আগেই তার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো অবসর নেননি। গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেখানে বসেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে উসকে দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। এই নেত্রীর প্রধান উজিরে আজম দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছিলেন কথার মহাজন।

তার আড়তে মজুত ছিল নানা কিসিমের কথা ও উপমা। মিথ্যে, অপ্রিয় এবং গালিসর্বস্ব কথা তিনি বলতেন সুপারির মতো চিবিয়ে চিবিয়ে। এসব কারণে তিনি অভিহিত হন ‘কাউয়া কাদের’ নামে। তিনিও বাহাস করে বলেছিলেন, ‘পালাব কোথায়?Ñমির্জা ফখরুলের বাসায়?’ সেই আত্মমর্যাদাহীন নেতা রাতের আঁধারে পালিয়েছেন মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে। কথার রাজা বলে পরিচিত, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের কর্মচারী বলরাম দাসকে থাপ্পড় মেরেছিলেন ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দলীয় নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষের সামনে ক্ষমতার হেডাম দেখান তিনি। কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন ‘তুই, তুকারি’ করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টাঙ্গাইল-৫ আসনের নিজ দলীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনের গালে চড় কষান ২০১৭ সালে। ১৯৯৬ সালে ঢাকার রাজপথে লগি-বইঠার তাণ্ডবকালে ওবায়দুল কাদের বঙ্গভবনে অক্সিজেন বন্ধ করার হুমকি দিয়ে সমালোচিত হন ব্যাপকভাবে। এক-এগারোর সরকারের সময় কারান্তরালে তার অবয়ব দেখেছে দেশবাসী। বেফাস কথা বলতে বলতেই শেষ পর্যন্ত ফেঁসে গেছেন ওবায়দুল কাদের।

একশ্রেণির রাজনীতিকের মধ্যে ন্যূনতম নীতিনৈতিকতাবোধ না থাকার কারণেই অবলীলায় অনেক কিছু বলছেন ও করছেন তারা। এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে ঝেড়ে উত্তর দেন ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। তারা যা বলেন বা করেন, তা পাল্টে দিতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে। সরে যেতে পারেন আগের অবস্থান থেকে। দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এ ধরনের নীতিবিবর্জিত কর্মকাণ্ড। ফলে এসব রাজনীতিবিদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে জনগণ। এক-এগারো-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিলক্ষিত হয়নি গুণগত কোনো পরিবর্তন। জেল-জরিমানার কারণে ব্যক্তি চরিত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসবে, এমনটি আশা করেছিলেন দেশবাসী। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। দেশের রাজনীতিবিদদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে এমনটিই মনে হয়েছে। জিন্দেগিতে রাজনীতি না করার ঘোষণা দিয়ে সে সময় স্বয়ংক্রিয় কায়দায় আবার আওয়ামী রাজনীতিতে ফিরে আসেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল।

বিএনপিতে সংস্কারবাদী নেতা সাইফুর রহমান ও জেনারেল মাহবুবুর রহমান আবার ফিরে যান বিএনপির মূলস্রোতে। তাদের রাজনৈতিক ডিগবাজি নিয়ে সে সময় সমালোচনার ঝড় উঠে সর্বত্র। রাজনীতিতে অনেক নেতা আছেন, যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন অতীতের প্রায় সবগুলো সরকারে। দলবদল করেন একের পর এক। জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জন করে আওয়ামী লীগ। চরম বিরোধিতা করে জামায়াতের। আবার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এক কাতারে শামিল হয়ে আওয়ামী লীগ জামায়াত-মিলে আন্দোলন করেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা গোলাম আজমের বাসায় গিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

দোয়া চেয়েছেন তাদের দলীয় প্রার্থী বদরুল হায়দার চৌধুরীর জন্য। জাতীয় সংসদসহ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও কূটনীতিকদের বাসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই টেবিলে বসে আওয়ামী লীগ নেতারা আলোচনা করেছেন এবং খাবার খেয়েছেন জামায়াতের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান অন্যান্য দলের নেতারা ও কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদকের সামনে করমর্দন করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে। পরদিন করমর্দনের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতারা। সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে নতুন করে ফতোয়া দেন তারা। বলেন, জামায়াত নেতাদের উপস্থিতির কারণে অন্য কোনো অনুষ্ঠান বর্জন করলেও ধর্মীয় এবং কূটনীতিকদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অসুবিধা নেই। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বুলি আওড়িয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বৈতরণী পার হতে খেলাফত মজলিসের মার্কা মারা ফতোয়াবাজ মুফতি শহীদুল ইসলামকে ২০০৬ সালে জোটে অন্তর্ভুক্ত করে সমালোচিত হয় ব্যাপকভাবে।

বাংলাদেশে রাজনীতি একটি লাভজনক পেশা। বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসার দ্বারা বৈভবের মালিক হয়েছেন অনেকে। রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যশ-খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছার অন্যতম বাহনও বটে। তাই গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে বয়োবৃদ্ধকালেও রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চান না রাজনীতিকরা। এমনকি রাজনীতি তাদের ছাড়তে চাইলেও তারা নাছোড়বান্দা। নির্বাচনের গন্ধ পেলে হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েন তারা। ওয়ান-ইলেভেনের পর দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদেরই একজন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ. জলিল হলফনামা দেন জীবনে আর রাজনীতি করবেন না বলে। ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল চারদলীয় জোট সরকারের পতন ঘটানোর আলটিমেটাম দিয়ে ট্রাম্পকার্ড চালাচালি করে চমক সৃষ্টিকারী এই আ. জলিল জেলখানা থেকে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে সিঙ্গাপুর যান প্যারোলে।

সেখানে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে কিছুটা দম নিয়েই চাঙা হয়ে ওঠেন। জাতির কাছে দেওয়া হলফনামা ভুলে গিয়ে গ্রহণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানও দলীয় গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সুযোগ করে দেন ঘরের ছেলেকে ঘরে ঢোকার। এ তো গেল আওয়ামী লীগের কথা। এক-এগারোর পর বিএনপির শীর্ষ নেতা জেনারেল মাহুবুব ও সাইফুর রহমান ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার ফিরে যান বিএনপির মূলধারায়। খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পর দলটির অনেক নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন মূল বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান নিজেদের। বাহাত্তরোর্ধ্ব বয়সি সাইফুর রহমান বনে যান দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আরেক নেতা জেনারেল মাহবুবকে শহীদ জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে জুতাপেটা করেন বিএনপির ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। কী বিচিত্র সেলুকাস! খালেদা জিয়ার মুক্তির পর এরাই আবার তার পাশে বসে সায় দেন নেত্রীকে দলের আজীবন চেয়ারপারসন করার প্রস্তাবে। এক-এগারোর সময় যারা আগে সংস্কারের কথা বলতেন, তারাই অবতীর্ণ হন চাটুকার ও স্তাবকের ভূমিকায়। এদের কারো মধ্যে সামান্যতম আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে তারা নিজ থেকেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতেন রাজনীতির ময়দান ছেড়ে।

রাজনীতিতে সততা, দেশপ্রেম ও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও অতিক্রম করছে ভয়াবহ ক্রান্তিকাল। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়মের স্পর্শ লাগেনি। খণ্ডকালীন সময়ের জন্য সামরিক শাসন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে পরিচালনা করে আসছিলেন রাজনীতিকরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিককালে একই অঞ্চলের দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো রাষ্ট্র দ্রুত উন্নয়নের শিখরে আরোহণ করেছে। অথচ বাংলাদেশ এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে অন্ধকারের কানাগলিতে। সামগ্রিকভাবে দেশে যে কোনো উন্নতি হয়নি, তা বলা ঠিক হবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন ঘটেছে, সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য। উন্নয়নের এ কৃতিত্ব যতটা না সরকারের, তার চেয়ে অধিক সাধারণ জনগণের। যাদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যক্তি উদ্যোগেই এটা সম্ভব হয়েছে। এ সময় দলীয় সরকারগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুণ্ঠনের মাধ্যমে অনেক রাজনীতিক নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে বাধাগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় উন্নয়নের ধারা।

যেহেতু রাজনীতিকরা দেশ শাসন করেছেন, সেহেতু জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার দায়ভার বহন করতে হবে তাদেরই। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ভূমিকা থাকলেও প্রশাসনিক নীতিগত মূল সিদ্ধান্ত প্রদানের অধিকারী একমাত্র রাজনৈতিক নেতারা। তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। তাই কাজের মধ্য দিয়ে রাজনীতিকদের প্রমাণ করতে হয় তাদের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম। প্রদর্শন করতে হয় পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা। রাজনীতিতে ক্ষমতা লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। নির্বাচনে জনগণ যে দলের পক্ষে রায় দেবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে, এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলো সুনিশ্চিত হতে চায় নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী অনেক নেতাকে কারাগারে পাঠানোর মধ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে সরকার প্রমাণ করতে পেরেছে যে অপরাধী যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। ঢালাওভাবে রাজনীতিকদের অসৎ, লোভী এবং দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। তবে আমাদের দেশের সিংহভাগ রাজনীতিক এই শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত। এটা প্রমাণ করার জন্য কোর্ট-কাচারি পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আপাতদৃষ্টিতেই তা অনুমেয়।

দশ বছর আগের অতি সাধারণ অনেক ব্যক্তি দলীয় রাজনীতির নামে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে মালিক বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার। তাদের অর্থ-বৈভবের স্ফীতি ঘটেছে জ্যামিতিক হারে, যা একজন সাধারণ মানুষের চোখেও অস্বাভাবিক বলে প্রতিভাত হয়। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দেশের শতসহস্র কোটি নয়, লাখো কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোয় বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসায়-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন অনেক রাজনীতিক। বিদেশে পড়াশোনা করছে তাদের সন্তানরা। একশ্রেণির সামরিক-বেসামরিক আমলা দেশের অভ্যন্তরেও গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। গণঅভ্যুত্থানে পর রাজনীতিকদের অবৈধ সম্পদের খতিয়ান ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। এসব কারণে জনমনে প্রশ্ন উঠেছেÑরাজনীতিকদের সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম নিয়ে। সময় এসেছে মিথ্যাচারের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানোর।

লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক