২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শহীদ আনাসের চিঠিটি যুক্ত করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বইটির শেষ প্রচ্ছদে শহীদ আনাসের চিঠিটির ছবি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ছবির নিচে ক্যাপশন হিসেবে দেওয়া হয়েছে 'মা-কে লেখা জুলাই আন্দোলনে শহিদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠি'।
জানা যায়, শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস ৫ আগস্ট একটি চিঠি লিখে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে যোগ দেয়। সেদিনই সে চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। একটি বুলেট তার বুকের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এরপরই শহীদ আনাসের চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত আনাসের চিঠিতে লেখা রয়েছে—‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই। —আনাস’
শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি। আনাসের চিঠি পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। এটা শুধু আনাসের চিঠি নয়, জুলাইয়ের সব শহীদ ও আহত মানুষের আকুতি।
এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী গণমাধ্যমে বলেন, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা তুলে ধরতেই এই চিঠি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শাহরিয়ার খান আনাসের মতো শত শত তরুণের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই দেশ ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে। এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে এই চিঠি ছাপানো হবে।
এ ছাড়া ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সরকারের মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে পাঠ্যবইয়ে। ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান’ শিরোনামের নতুন অধ্যায়ে এসব বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে।