Image description

গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশের হেড অব নিউজ নাজনীন মুন্নীকে চাকরি থেকে বাদ দিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষকে কয়েকজন তরুণ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মহানগর শাখা কমিটির নাম করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত চ্যানেলটির কার্যালয়ে গিয়ে এই হুমকি দেয়া হয়। তারা বলেন, ‘চাকরি না ছাড়লে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের মতো অফিস পুড়িয়ে দেয়া হবে।’

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দৈনিক মানবজমিনকে নাজনীন মুন্নি বলেন, ‘আমাকে সরাসরি কিছু বলেনি তারা। তবে অফিসে এসে হুমকি দিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা শো করি। এর আগে তারা ফোন দিয়ে আমার শো বন্ধ করে দেয়। সম্ভবত চেয়ারম্যান স্যারকে তারা ফোন দেয়। বিভিন্ন অখ্যাত পত্রিকায় নানা ধরনের গুজব লিখে ওই লিংক তাকে পাঠায়। যা খুশি তাই লিখে পাঠায়। বেশ কয়েকদিন যাবত এগুলো করছিলো। তারপর আমার শো করা অ্যাজইউজুয়াল বন্ধ হয়ে যায়।’

নাজনীন মুন্নী বলেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যাই। সেখান থেকে ১৭ ডিসেম্বর ফিরি। ফিরে আসার পর আমার শো করার কথা। কিন্তু আমাকে আর শো করতে দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেও এক সপ্তাহ শো করতে পেরেছি। তার আগে আবার বন্ধ ছিলো। মানে দুই মাস করেছি, আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার এক সপ্তাহ করেছি, তারপর আমেরিকা গিয়েছি। সেখান থেকে ফেরার পর শো বন্ধ।’

শো বন্ধ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উদ্ভট ধরনের গল্প বানিয়ে এগুলো চেয়ারম্যানকে পাঠায়। প্রথমে সহজভাবে বলেছেন বাদ দেয়ার জন্য। আমি বলেছি—কেন আমি বাদ দেবো। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে তাকে ফোন দেয়। তবে চেয়ারম্যান স্যার কখনো আমাকে বলেননি। শুধু আমাকে বলেছেন দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। আপনি কয়েকদিন শো কইরেন না। শো করলে তো সবার নজরে পড়ে আরও বেশি। এটা নিয়ে আমি আমার মতো করে বলেছি—কেন করবো না। এটা তো লুকানোর কিছু নেই। আমি একটা টেলিভিশনে কাজ করি। জার্নালিস্ট ও অ্যাংকর, আমাকে তো দেখবেই মানুষ। অ্যাংকরিংয়ে যদি কোনো ক্রাইসিস থেকে থাকে তাহলে আপনারা আমাকে বলবেন যে, এই সমস্যা হচ্ছে। শব্দগত বা কারও সাপোর্টে কথা বলেছি কিনা—তখন আপনি বন্ধ করতে পারেন। কে কী দিচ্ছে এর জন্য আমার শো বন্ধ—এটা কেমন কথা! তখন তিনি বললেন, এখন তো কোনো যুক্তির কথা খাটছে না।’

নাজনীন মুন্নী বলেন, ‘প্রথমে আমাকে বললেন তফসিল ঘোষণা করুক। তখন অবস্থা ঠান্ডা হয়ে যাবে এবং এটা নিয়ে কোনো কেওয়াজ করবে না। তখন আমি বললাম—ঠিক আছে, তবে তফসিল ঘোষণার করার পরও শো করতে দেয়া হয় না। তখন আমি বিষয়টা জানতে চাইলাম। তখন বলা হলো—ঝামেলা হচ্ছে। সবাই যখন নমিনেশান পেপার জমা দেবে তখন থেকে করবেন। এরমধ্যে শো-এর জন্য একজন হোস্ট হিসেবে ঠিক করে ফেললেন। তখনই আমি বুঝেছি আমাকে আর শো করতে দেয়া হবে না।’    

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিষয়টা নিয়ে আমাদের সবার মন খারাপ ছিলো। এরপর ২১ ডিসেম্বর ৭-৮ জন আমার অফিসে আসেন। তবে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তখন হয়ত আমি অফিসে ছিলাম না বা বাইরে বের হয়েছি। তখন বিষয়টা আমাকে জানানো হয়নি। পরদিন আমি নরমালি অফিস করেছি। এরপর সন্ধ্যার দিকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়। আমাকে বলা হয়, অনেকগুলো ছেলে আসছিলো, তারা হুমকি দিয়ে গেছে। অফিস পুড়িয়ে দেবে।’

নাজনীন মুন্নী বলেন, ‘২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রিপোর্টারদের সঙ্গে বৈঠকের পর আমি চলে যাই। এরপর এমডি স্যারের কাছে ফোন আসে। কয়েকটা ছেলে বলছে তারা এমডি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। তিনি তাদের আসতে বলেন। তারপর তারা ৭-৮ জন আসেন। এমডির রুমে প্রবেশ করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মহানগর শাখা কমিটি হিসেবে তারা পরিচয় দেন। আসার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আমাদের শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের জন্য মন খারাপ। আপনাদের গ্লোবাল টিভিতে হাদি ভাইয়ের কাভারেজ ভালো হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের এমপির চ্যানেল আমরা জানি, কিন্তু আমরা কিছু বলি না। আপনারা নাজনীন মুন্নীকে কেন রাখছেন। উনি তো আওয়ামী লীগের দোসর। তখন এমডি বলেছেন, উনি আওয়ামী লীগের দোসর কীভাবে হন। আমরা তো উনাকে বুঝেশুনেই নিয়েছি। তখন তারা বলে, উনি আওয়ামী লীগের দোসর। উনাকে আপনারা বাদ দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘অফিস আমার বিষয়ে আন্তরিক। চেয়ারম্যান ও এমডিকে বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত আমার বিষয়ে হুমকি দেয়া হয়। তবুও তারা আমার পক্ষেই থেকেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর নিতে পারেননি। কারণ দুইদিন আগে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পুড়িয়ে দেয়া হয়।’

এক দল তরুণের হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার দুপুর ২ টার ৩৮ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দেন নাজনীন মুন্নী। ওই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মহানগর শাখা কমিটির নাম করে ৭-৮ জন আমার অফিসে এসে হুমকি দিয়ে গেছে চাকরি না ছাড়লে অফিস প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের মতো আগুন ধরিয়ে দেবে।’

বর্তমানে গ্লোবাল টিভি বাংলাদেশের হেড অব নিউজ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন নাজনীন মুন্নী। গত জুলাই মাসে এই চ্যানেলে তিনি যোগ দেন তিনি। এর আগে ডিবিসি নিউজ চ্যানেলে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর ছিলেন নাজনীন মুন্নী।