Image description

Ali Ahmad Mabrur (আলী আহমেদ মাবরুর)


সত্যি কথা বলতে কি- নিজেদের ঘরানার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বললে দেখা যায়, এখনো সমাজের বিভিন্ন লেভেলে ছুপা আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদের ছুপা সমর্থক রয়ে গেছে। তারা পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়তো আপনার আমার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে; কিন্তু মনে মনে তারা এখনো ফ্যাসিবাদী চেতনাই লালন করছেন। আর এ কারণে দু এক সময় মুখ ফসকে হয়তো কিছু কথা বেরিয়েও আসছে।
 
এক্ষেত্রে শহীদ শরীফ ওসমান হাদী একটা লিটমাস্ট টেস্টের মতো। আপনি তার প্রসঙ্গ তুলেও মানুষগুলোকে যাচাই করতে পারেন। যেমন আমি নিজেই শুনেছি, কেউ কেউ বলছেন, "হ্যাঁ ঠিক আছে। সে একজন জুলাই যোদ্ধা ছিল; অন্যদের তুলনায় সৎ ছিল কিন্তু তাই বলে তাকে নিয়ে একটু বেশিই মাতামাতি করা হচ্ছে। কিংবা কেউ কেউ তাকে প্রকাশ্যে গিনিপিগ বলে ফেলছেন আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, তার জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার যেতে হবে কেন? কিংবা সে এমন কী ছিল যে, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজার আয়োজন করতে হবে? আর সবচেয়ে বেশি যে কথাটি বলতে শুনবেন তা হলো, কোন যুক্তিতে তাকে জাতীয় কবির পাশে দাফন করা হলো? একটা অনির্বাচিত সরকার কাউকে দাফন নিয়ে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ইত্যাদি।
 
প্রকৃত সত্য হলো, এই মানুষগুলো মনস্তাত্ত্বিকভাবে কখনোই জুলাই বিপ্লব বা বিপ্লব পরবর্তী সরকার অথবা আওয়ামী লীগের বিদায় কোনো কিছুই মানতে পারেনি। প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউস এবং সিভিল সোসাইটির মধ্যেও এ ধরনের চিন্তা বিদ্যমান আছে। তবে আওয়ামী লীগের আমল থেকেই আমরা দেখে আসছি এলিট ক্লাস এবং বড়ো বড়ো মিডিয়াগুলোর সাথে সাধারণ মানুষের চিন্তা ও দর্শনগত ব্যবধান আছে। মিডিয়াগুলো যে ভাষায় কথা বলে কিংবা এলিট মানুষগুলো যেভাবে নাক সিটকায়- সেগুলো কখনোই গণমানুষকে স্পর্শ করে না।
 
জুলাই বিপ্লব ছিল গণমানুষ বিশেষ করে একদম নিম্নবিত্ত ও ধর্মপরায়ণ সাধারণ চিন্তাধারার মানুষগুলো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তারা সাড়ে ১৫ বছর টেলিভিশনগুলোতে নিজেদের চিন্তার বাইরের টকশো দেখেছে। ২০ জন মানুষের মানববন্ধনকে বিশাল ব্যাপার হিসেবে উপস্থাপিত হতে দেখেছে। দুজন অতিথি আর উপস্থাপক মিলে তৃতীয় ভিন্ন মতাবলম্বী অতিথিকে কোণঠাসা করতে দেখেছে। এত বছর এসব নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পরও গণমানুষের বিশ্বাসের জায়গায় পরিবর্তন হয়নি। মিডিয়াগুলো সমাজের সাধারণ মানুষকে যেমন প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি সাধারণ মানুষেরাও মিডিয়া এবং এলিট ক্লাসের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সমাজে এই দু ধারা এখন স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান।
 
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি সত্যিকার অর্থে জুলাই বিপ্লবকে ধারন না করার কারণে বিপ্লবের নেপথ্য নায়ক তথা সাধারণ মানুষের সাথে বিএনপির গ্যাপ তৈরি হয়েছে শুরু থেকেই। বিএনপি এখন ক্রমাগত মিডিয়া এবং এলিট ক্লাসের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে। জামায়াত জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময় বিপ্লবকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের বড়ো একটা অংশের সাথে যেভাবে কানেক্ট করতে পেরেছিল পরবর্তীতে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বেশি ফোকাস দেওয়ার পর জামায়াতের সাথেও তাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
মিডিয়ার একপেশে বয়ানে আগেও সাধারণ মানুষগুলোর কিছু এসে যেত না। প্রশাসন কি বলল না বলল তাতেও তারা খুব পাত্তা দিত না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও তাদের খুব বেশি আস্থা ছিল না। ফলে জুলাই বিপ্লবের সময়ে তারা নিজেদের সন্তানকে বিপ্লবের সম্মুখ সারীতে হাজির হতে দিয়েছিল এবং একটি পর্যায়ে তারা নিজেরাও স্বতস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল।
 
এখন আবার তারা অনেকটাই একাকী হয়ে পড়েছে। তাদের এখন স্বস্তি মিলছে শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর কবরে গিয়ে। দিনে, দুপুরে, সন্ধায় বা রাতে সবসময় শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর কবরে তাই অসংখ্য নারী পুরুষের ভীড়। চোখের পানি দিয়ে তারা শহীদের জন্য দোয়া করছেন। কারণ তারা বারবার অনুভব করছেন শরীফ ওসমান হাদীই ছিলেন সেই একজন যিনি বিপ্লবের আগে বা পরে কখনোই তাদের ছেড়ে যাননি। বরং তিনি সেই ভাষাতেই কথা বলেছেন যা তাদের মনের ভাষা। শরিফ ওসমান হাদী ঐ চিন্তাগুলোই করেছেন যেগুলো এদেশের সাধারণ মানুষ মনে মস্তিষ্কে লালন করে। তাই ছুপা রুস্তমেরা একজন শহীদ শরীফ ওসমান হাদীকে যতটাই আড়াল করার চেষ্টা করুক না, কিংবা তাকে হেয় করার প্রয়াস চালাক না কেন; সাধারণ মানুষের মনে তিনি প্রতিদিন আগের থেকে বেশি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছেন।
শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না ইনশাআল্লাহ।