দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি চোরাগোপ্তা হামলা, খুনোখুনি এবং একাধিক নির্বাচন কার্যালয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও আবার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা। ককটেল নিক্ষেপ এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রার্থীদের নিরাপত্তায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার নতুন নীতিমালা জারির মধ্য দিয়ে সেই উদ্বেগ আরও বাড়ছে। নির্বাচনের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হাতে থাকলে পরিস্থিতি ভীতিকর হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
আগের সব নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হতো। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, সহিংসতা ঠেকানো এবং ভোটার ও মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আস্থা তৈরি করতে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়ে থাকে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও অভিযান চালানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত কারও ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পরিবেশ ভিন্ন রকম হয়, সহিংসতার ঝুঁকি থাকে, তা ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের বহন বা প্রদর্শন ভোটের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এ সময়টাতে কাউকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে দেওয়া হয় না। কিন্তু এবার নতুন বাস্তবতায় নির্বাচনের সময়েও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং দেহরক্ষী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি আগের লাইসেন্সধারীদের অস্ত্রও থাকছে তাদের হাতে। এ কারণে এবার নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ এরই মধ্যে নিরাপত্তা, গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন।
এদিকে পুলিশের লুণ্ঠিত এক হাজার ৩৩৬টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ সদরদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, যে কোনো মূল্যে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মাঠপর্যায়ে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এলাকাভিত্তিক অপরাধী তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শুরু হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক
চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গতকাল রোববার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন, যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম, নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনও (ইসি) বৈঠক করেছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম এবং আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখাসহ বেশ কিছু বিষয় ছিল আলোচ্য সূচিতে। ভোটের পরিবেশ বিঘ্ন করে, এমন অপতৎপরতা রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ইসির। শিগগির গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আলাদা বৈঠকের কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে কেউ আবেদন করলেই তাঁকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে, এমনটি নয়। যার কাছে অনুমোদিত অস্ত্র থাকলে, তা নির্বাচনের পরিবেশের জন্য সহায়ক হবে তিনি লাইসেন্স পাবেন। কারও কাছে অস্ত্র থাকলে সেটি নির্বাচনের পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে, এমন ব্যক্তি লাইসেন্স পাবে না। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা।
আইজিপি আরও বলেন, যে কোনো বেআইনি পদক্ষেপ আমরা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। এখনও পুলিশের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। থানায় ওসিকে হামলা করা হচ্ছে। শান্তির বাণী শুনিয়ে সব সময় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা যায় না। সবার সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে শক্তভাবে আইন প্রয়োগ করতে চাই।
তিনি বলেন, ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় পর্যায়ের যে অভিযান চলছে, সেখানে ফ্যাসিস্ট ও তাদের সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে জোর দেওয়া হচ্ছে। দুই হাজারের বেশি অনুনমোদিত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ভোটের আগে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বৈধ যেসব অস্ত্র এখনও বেহাত, তা কীভাবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত উদ্ধার করা যায় সেই ছক করা হয়েছে। আবার সীমান্ত দিয়ে যাতে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। দাগী ও চিহ্নিত অপরাধীরা যাতে সীমান্ত দিয়ে পালাতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, পেশাদার অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা জামিন ছাড়া পেয়েছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাদের দ্রুত আবার আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
ইসির বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, তিন বাহিনী প্রধানদের উপযুক্ত প্রতিনিধি, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি ও র্যাবের মহাপরিচালক, এসবি ও সিআইডির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার এবং কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আবার যৌথ বাহিনীর অভিযানের নির্দেশ
ইসির বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে মাঠ পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান আবার চালুর নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।
তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য হবে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সাধারণ মানুষ, ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। এলাকাভিত্তিক চেক পয়েন্টে তল্লাশির ওপর গুরুত্ব ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে জোর দেন এ কমিশনার। সন্ত্রাসীদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে জোর দিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেটরা সমন্বিতভাবে কাজ করবেন।
এই কমিশনার আরও বলেন, কমিটিগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করা, স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাহিনীগুলো নিজ নিজ নেতৃত্বে কাজ করবে। কিন্তু সমন্বয়টা হবে সমন্বয় সেলের মাধ্যমে। আর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা থাকবে অভিযান অনুযায়ী। সম্ভাব্য প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়েও পুলিশ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ইসিকে।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রার্থী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দিচ্ছে বা স্বতন্ত্র হিসেবে যারা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছি, পুলিশ থেকে ইতোমধ্যে একটা প্রটোকল তৈরি করানো হয়েছে। সেই প্রটোকল অনুযায়ী যারা নিরাপত্তা চাচ্ছেন, সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে এর বাইরেও যদি কেউ নিরাপত্তা ঘাটতি অনুভব করেন, তারা পুলিশের কাছে চাইলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সভার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নির্বাচন ভবনে যান। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী পৃথক বৈঠক করেন।
এ দুটি বৈঠকের পর বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধি নিয়ে বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা ছিল। তবে অনেক মানুষ এই ভালো উদ্যোগের খারাপ সুযোগ নিয়েছেন। তাই নির্বাচন কমিশন এখন বাহিনীগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা মানবিক হব, যারা মানবিক তাদের প্রতি। যারা দস্যুতা করতে চায়, নৈরাজ্য করতে চায়, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার দরকার নেই।
অস্ত্রের নতুন নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন
১১ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে উৎসবের পরিবর্তে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনায় প্রার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে জোর না দিয়ে উল্টো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার সংকট আরও বেড়ে যাবে।
বিলুপ্ত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তার শঙ্কা থাকলে সরকার ও ইসির সব আয়োজন ব্যর্থ হতে বাধ্য। প্রার্থী ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা দিয়ে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের মতো মহাআয়োজন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সরকারকে সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সক্রিয় থাকতে হবে। কেউ অন্যায় করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা জরুরি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে সদাচরণ করতে হবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেবে না। এমন ব্যক্তি নিজের বন্দুক দিয়ে নিজেকে সুরক্ষাও দিতে পারবে না। অতীতে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্রও জমা নেওয়ার নজির রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের হত্যাকাণ্ডগুলো পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, যারা বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত অস্ত্র ছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিছিল, পাল্টাপাল্টি অবস্থান– এসব পরিস্থিতিতে অস্ত্রের উপস্থিতি কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নয়, পুরো সমাজকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ওসমান হাদিকে গুলি করার পর ১৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ দিন। এর পর লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিলুপ্ত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও গত তিনটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য ড. মো. আব্দুল আলীম সমকালকে বলেন, ইতোপূর্বে সব নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র থানায় জমা নেওয়ার নজির রয়েছে। ভোটের আগে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বিশেষ অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না, বরং সরকার ভিন্ন দিকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভোটের আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হতে পারে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে না পারলে ভালো ভোট হবে না।
আব্দুল আলীম আরও বলেন, জানি না এই নীতিমালা কতটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এর বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। কারণ বৈধ অস্ত্র দেওয়ার জন্য অস্ত্র কিনতে হবে, এরপর নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করতে হবে। এর জন্য ঝুঁকিও রয়েছে। একজন প্রার্থী আরেকজন প্রার্থীর প্রতি উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র চালাতে পারেন।
তবে সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোটের মাঠে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এর প্রয়োজন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই নীতিমালা সহায়ক হবে।