Image description
ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরের একটি বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভােইরাল হওয়া ভিডিওটিতে শোনা যায় একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলছেন, “জামায়াত ইসলাম করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কী দায়িত্ব? নৈতিক দায়িত্ব। কী জন্য? যদি আপনি জান্নাতে যেতে চান। জান্নাতে যেতে না চাইলে কোনো সমস্যা নাই। ৭২ কাতারের মধ্যে প্রথম কাতারে থাকতে চাইলে জামায়াত ইসলাম করতে হবে। এর মধ্যে আর দ্বিতীয় কোনো অপশন নাই বাবা।"
বক্তব্যটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে শাহরিয়ার কবির তার ফেসবুক পেইজ থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন যেখানে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপটির একাংশ এবং তার নিজের ভিন্ন আরেকটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের ক্লিপ যুক্ত রয়েছে।
শাহরিয়ার তার ভিডিওটির ক্যাপশনে লিখেছেন, “এডিটিং করে বিভ্রান্ত নয়”।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির মধ্যে যখন তার বক্তব্যের নিচের অংশটি উচ্চারণ করা হচ্ছে তখন একটি ‘বিপ’ সাউন্ড যুক্ত করে স্ক্রিনে ইংরেজিতে ‘FAKE’ লিখে সিল দেয়া হয়েছে।
‘FAKE’ সিল দেয়া অংশটি হলো: “কী জন্য? যদি আপনি জান্নাতে যেতে চান। জান্নাতে যেতে না চাইলে কোনো সমস্যা নাই। ৭২ কাতারের মধ্যে প্রথম কাতারে থাকতে চাইলে জামায়াত ইসলাম করতে হবে।”
অর্থাৎ স্পষ্টভাবেই তিনি দাবি করেছেন তার প্রচারিত ভিডিওর যে অংশে উপরের বক্তব্যটুকু রয়েছে তা ভুয়া।
পরে এই ঘটনায় নিজের বক্তব্যের ১৬ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ““যারা এই ‘কার্ট, কার্ট’ ভিডিওটি দেখে অযথা বাজে মন্তব্য করছেন, তারা আল্লাহর ওয়াস্তে অনুগ্রহ করে সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখার পর আমার সম্পর্কে মন্তব্য করবেন।”
তিনি যে ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও আপলোড করেছেন সেটির নাম ‘ABS BIPLOB’; ভিডিওর ক্যাপশনে চ্যানেলটি উল্লেখ করেছে এটি ‘ফুল ভিডিও’।
তবে দ্য ডিসেন্ট এর বিশ্লেষণ বলছে, ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরের এই দাবি অসত্য। বরং তিনি আসলেই “জান্নাতে যেতে চাইলে” “জামায়াতে ইসলামী করা নৈতিক দায়িত্ব”-- এই কথাগুলো বলেছেন।
কারণ:
প্রথমত, ভাইরাল হওয়া ভিডিওর যে অংশটুকুকে তিনি ‘এডিট করা’ বলে দাবি করেছেন তাতে প্রকৃতপক্ষে এডিট করা কোন প্রমাণ বা নির্দশন পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত, ABS BIPLOB ইউটিউব চ্যানেলের যে ভিডিওটি শাহরিয়ার কবির শেয়ার করেছেন তার ‘সম্পূর্ণ ভিডিও’ হিসেবে সেটি এডিট করা।
এই ভিডিওর ১২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড থেকে শোনা যায় শাহরিয়ার বলছেন, “জামায়াত ইসলাম করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কী দায়িত্ব? নৈতিক দায়িত্ব।”
এরপর হুট করে ভিডিওটি কেটে যায় এবং এরপরে ভিডিওর যুক্ত করা বাকি অংশে দেখা যায় শাহরিয়ার বলছেন, “এর মধ্যে আর দ্বিতীয় কোনো অপশন নাই বাবা”।
অর্থাৎ, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বাড়তি যে অংশটুকু আছে তা এই কাট করা ভিডিওতে নেই। বাড়তি অংশটুকু হলো: “কী জন্য? যদি আপনি জান্নাতে যেতে চান। জান্নাতে যেতে না চাইলে কোনো সমস্যা নাই। ৭২ কাতারের মধ্যে প্রথম কাতারে থাকতে চাইলে জামায়াত ইসলাম করতে হবে।”
১২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে হুট ভিডিওটি কেটে যাওয়ার আগের ও পরের বাক্যগুলো একসাথে মেলালে দাঁড়ায়: “জামায়াত ইসলাম করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কী দায়িত্ব? নৈতিক দায়িত্ব। এর মধ্যে আর দ্বিতীয় কোনো অপশন নাই বাবা।”
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই বাক্যগুলো একসাথে লিখলে তা অর্থপূর্ণ হয় না। বরং ভাইরাল হওয়া ভিডিও মতে, ‘জান্নাতে যাওয়ার জন্য’ ‘জামায়াত করার’ একমাত্র যে অপশনের কথা তিনি বলেছেন সেটি যুক্ত করলে বক্তব্যটি অর্থপূর্ণ হয়।
অর্থাৎ, ‘পূর্ণাঙ্গ ভিডিও’ বলে যেই ভিডিও শাহরিয়ার শেয়ার করেছেন তার ফেসবুকে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ নয়।
ABS BIPLOB মূলত ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যের অনেকগুলো ছোট ছোট ক্লিপ গত ৭ ডিসেম্বর থেকে তার ফেসবুক ও ইউটিউব একাউন্টে প্রকাশ করে আসছেন। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর তিনি আলোচ্য বিতর্কিত ভিডিওটি আপলোড করে যে ক্যাপশন দেন তার প্রথম লাইনটি হলো, “জামাত করা মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব" — Barrister A S M Shahriar Kabir এর জোরালো ইসলামিক বক্তব্য”।
দীর্ঘ ক্যাপশনটি হ্যাশট্যাগ সহ আরও কয়েকটি ফেসবুক আইডিতে হুবহু কপি করে ১৭ ডিসেম্বর ভিডিওটি পুনপ্রকাশ করা হয়েছিল।
ABS BIPLOB একাউন্টটি থেকে প্রকাশিত গত ৩ সপ্তাহের ভিডিওগুলোর ক্যাপশন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটির ক্যাপশনের প্যাটার্নের সাথে পুনপ্রকাশিত অন্য একাউন্টগুলোর ক্যাপশনের প্যাটার্ন মিলে যায়।