Image description
ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম ঢাকার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জানান, ছেলে ফয়সালের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। যোগাযোগ ছিল কম। ছেলে সাধারণত অন্য জায়গায় থাকত।

আর তারা মেয়ের বাসায় থাকতেন। তবে ঘটনার দিন ফয়সাল তাদের বলে যান, তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছেন।

জবানবন্দিতে ফয়সালের মা-বাবা বলেছেন, ফয়সাল ঘটনার দিন ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকে কোনো মোবাইল ব্যবহার করেননি। ঘটনার আগের রাতেই হাদির পরবর্তী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জানত।

ফয়সাল তিনটি বিয়ে করেছেন এবং একজন বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। ডেফোডিলে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতিতে জড়িত। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি।

তারা আরো জানান, ঘটনার দিন হাদিকে শ্যুট করে ফয়সাল শেরেবাংলা নগরে তার বোনের বাসায় যায়।

ওই বাসায় তার বাবা-মা এবং বোন ছিলেন। সেখানে গিয়ে ফয়সাল হুন্ডার মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেট পরিবর্তন ও আলামত ধ্বংস করে। এরপর সে সিএনজি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। তার বাবাই সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক করে দেন। ফয়সাল বের হওয়ার সময় বলেছে, সে বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর ফয়সাল মা-বাবাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, গতকাল ফয়সালকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে পালাতে সহযোগিতা করায় গ্রেপ্তার মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া একইদিন ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার আব্দুল হান্নানের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

ফয়সালকে গাড়ি ভাড়া নিতেন নুরুজ্জামান : এই মামলায় গ্রেপ্তার নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। চলাকালে আসামি নুরুজ্জামান বলেন, আমি রেন্ট কারের ব্যবসা করি। ৯ মাস আগে আসামি ফয়সাল করিমের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। তবে তিন মাস তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে গাড়ি ভাড়া নিতেন। তিনি সাটুরিয়া ও আলাউদ্দিন পার্কে যেতেন। বিকাশে পেমেন্ট করতেন। তবে ঘটনার দিন আমার গাড়ি ছিল না। ওইদিন আমার বন্ধু সুমনের গাড়ি ঠিক করে দিয়েছিলাম। গাড়িটি মৎস্য ভবনের সামনে যেতে বলেন। পরে আবার কল দিয়ে আগারগাঁও বিএনপি বাজারে যেতে বলেন। আমি তো গাড়ির ব্যবসা করি। গাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা কি করছে সেটা তো বলতে পারব না। 

তখন বিচারক বলেন, বিষয়গুলো আপনি জানেন। রিমান্ড কোন শাস্তি না। আপনি আরো সাহায্য করেন। আপনাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার হলো। তবে রিমান্ড শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিল না।

হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সঙ্গে হান্নানের রেজিস্ট্রেশন করা দুই গাড়ি নাম্বার মেলেনি : হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর গত ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাব-২ সন্দেহভাজন কীসে আব্দুল হান্নানকে আটক করে র‍্যাব-২। পরবর্তী তাকে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে ১৪ ডিসেম্বর তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ড দেয়া হয়। রিমান্ড চলাকালে তাকে শোরুম মালিকের মুখোমুখি করা হয়। এ ছাড়া বিআরটিএ-তে তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি সুজুকি জিক্সার ও আরেকটি ইয়ামা গাড়ি রয়েছে। তবে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছে হোন্ডা ব্র্যান্ডের হর্নেট মডেলের গাড়ি। হান্নানের মোটরসাইকেলের নম্বর ঢাকা মেট্রো-ল ৫৪-৬৩৭৫, যা একটি সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মোটরসাইকেল। হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বরের সঙ্গে একটি সংখ্যার ভুল রয়েছে। যে নম্বরের শেষে ৬ থাকার কথা, সেখানে ৫ শনাক্ত করা হয়েছে। পরে রিমান্ড শেষে গতকাল বুধবার হান্নানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পল্টন থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক সামিম হাসান বলেন, র‍্যাব কর্তৃক আটক আব্দুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার নামে বিআরটিএ-তে দুটি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেটের সঙ্গে তার রেজিস্ট্রেশন গাড়ির নাম্বার প্লেটের মিল পাওয়া যায়নি। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তার শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু রিমান্ডে রয়েছেন। এদের মধ্যে গত ১৬ ডিসেম্বর কবিরের সাত দিন ও ১৫ ডিসেম্বর অপর তিন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

এর আগে হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার সূত্রে জানা জানা গেছে, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন প্রচারণায় অংশ নেন শরিফ ওসমান হাদি। ওইদিন মতিঝিলে জুমার নামাজ পড়ে নির্বাচনি প্রচারণা শেষ করেন তিনি। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওইদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।