ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির শুটার হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল করিম মাসুদ সীমান্তে পৌঁছার আগে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ফয়সাল ও তার সহযোগী আলমগীর হোসেন ঢাকার ধামরাই থেকে যে প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান, সেটির চালকের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা পৌঁছানো হয়। ময়মনসিংহে শহরের একটি দোকান থেকে টাকা তোলেন ফয়সাল।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রটি বলছে, ঢাকা থেকে সীমান্ত এলাকায় যেতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি প্রাইভেটকার ফয়সাল ও আলমগীর ব্যবহার করেছেন– এমন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
এদিকে সন্দেহভাজন আরও দু-তিনজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তদন্তে ফয়সালের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে চলছে অভিযান। এ ছাড়া হাদির ওপর হামলার নেপথ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক এক শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত সহকারী এবং এক সন্ত্রাসীর নাম বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। চিকিৎসকদের ভাষায়, তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তাঁর আরও একটি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তবে সেটি করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি এখনও হয়নি।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট রোডে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, হত্যাচেষ্টায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।
এদিকে হাদিকে গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের গুলিসহ ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল র্যাবের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। র্যাব জানায়, প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সালের বোনের বাসার পাশের একটি স্থান থেকে ম্যাগাজিনটি উদ্ধার করা হয়।
মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে নতুন তথ্য
হাদিকে গুলির সময় ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটির ‘মালিক’ আবদুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রোববার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন, মোটরসাইকেলটি তিনি আগেই একটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দেহভাজন ফয়সালের সহযোগী মো. কবির ওরফে দাঁতভাঙ্গা কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। তিনি আদালতে বলেন, হান্নানের বিক্রি করা মোটরসাইকেলের মালিক কবির। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কবির, ফয়সালসহ অন্য আসামিরা ওসমান হাদির কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন বলেন, ওই মোটরসাইকেলে গিয়ে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। আদালতে কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে আদালতের অনুমতি নিয়ে কবির বলেন, ফয়সালের মোটরসাইকেল চালাতেন তিনি, তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন। সর্বশেষ ১৮ দিন আগে ফয়সাল তাঁকে বলেন, ‘আমি হাদির সঙ্গে ব্যবসা করি, তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করি। তাঁর কাছে যাব। আমি যেতে চাইনি, এরপরও উনি আমাকে নিয়ে গেছেন।’
আদালত জানতে চান, মোটরসাইকেলটি কার? জবাবে কবির বলেন, আমার বন্ধু মাইনুল ইসলাম শুভ মোটরসাইকেলটি কিনেছিল আমার আইডি কার্ড দিয়ে। মালিকানা ওর, তবে আমার আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. হাসিবুজ্জামান সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হাদির আরেকটি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন
সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে প্রাথমিক পরীক্ষার পর হাদির অবস্থার কিছুটা অবনতি দেখা গেলেও তা এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। তার আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। তবে সেটি করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি এখনও হয়নি হাদির।
এর আগে গতকাল দুপুরে সিঙ্গাপুর হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জন ও হাদির চিকিৎসায় যুক্ত ডা. আব্দুল আহাদ জানান, হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।