বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বাসভবন এবং অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নং বাসাতে উঠবেন তিনি। এই বাসার পাশেই ভাড়া করা বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারও তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে, যেটি থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের ৯০নং সড়কে ১০/সি’র নতুন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর টানা ১৭ বছর লন্ডনে নির্বাসিত থাকার পরে ঢাকায় ফিরছেন তারেক রহমান। তার আগমন উপলক্ষে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ২৫ তারিখ হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছলে তাকে নেতা-কর্মীরা সংবর্ধনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নেতার অপেক্ষা আছে দেশবাসী। সেদিন দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সড়কে দুই পাশে সুশঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবে। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজ করছি।’
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তারেক রহমানকে কীভাবে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমানের বাসভবন ঠিক করা হয়েছে গুলশান এভিনিউ’র ১৯৬ নং বাসাটি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটি বরাদ্ধ দেয়। কয়েক মাস আগে এই বাড়ির দলিলপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে হস্তান্তর করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তপক্ষের রাজউকে চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু। সেই বাড়িতে উঠছেন তারেক। এই বাসার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাসার সামনে নিরাপত্তা ছাউনি বসানো হয়েছে। সড়কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামারা।
নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা জানান, এখানে তারেক রহমান সাহেব থাকবেন, সেজন্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারেক রহমানের জন্য গুলশানে চেয়ারপারসনের কারয়ালয়ে চেয়ারপারসনের চেম্বারের পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে তার জন্য। কেন্দ্রীয় কারযালয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আলাদা চেম্বার আছে। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্যও আরেক চেম্বার করা হলো।
এদিকে গুলশানের ৯০ সড়কের ১০ সি বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে বিএনপি অফিস হিসেবে। চার তলায় এই ভবনে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম। অন্যান্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে গবেষণা সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাযরুল কবির খান বলেন, ‘আমরা যারা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি। আমরা এখন অধীর আগ্রহে সময় গুনছি কখন আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র আধুনিক স্বনির্ভর রাষ্ট্র নির্মাণে স্বপ্ন দ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ঢাকার মাটি পা রাখবেন। সেই লক্ষ্যে আপনি যাই বলুন, আমাদের সব প্রস্তুতি তাকেই ঘিরে। ইনশাল্লাহ দেশের মানুষ যেমন প্রত্যাশা করছে, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা হারানো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন।’
নতুন অফিস খোলার পরে বিকেলে এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মাহাদী আমিন বলেন, এটি বিএনপির একটি কার্যালয়। এখান থেকে নিরবাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত যে আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে গণ মানুষের মাঝে রয়েছে তীব্র আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ। আমাদের নেতা বিশ্বাস করেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতি এবং আদর্শের ঊর্ধ্বে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদের এ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য। ইতোমধ্যে বিএনপি প্রণীত দেশ গড়ার পরিকল্পনার শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে ঢাকায় এক সপ্তাহব্যাপী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন। আমাদের তৃণমূলের নেতাগণ মানুষের নেতা তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যেহেতু এই বাংলাদেশটা আমাদের সবার আমাদের ধর্ম-বর্ণ-আদর্শ -দর্শন রাজনীতি অবস্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের দল মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সবাইকে এক হয়ে এই দেশটাকে গড়তে হবে, আমাদের সবাইকে একযোগে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
মাহদী আমিন বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা একটি জাতীয় রিল মেকিং প্রতিযোগিতা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের এই আয়োজন শুরু হবে আজকে থেকে এবং এই প্রতিযোগিতা চলমান থাকবে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে দেশ এবং বিদেশের সব শ্রেণি এবং পেশার মানুষ দেশ গড়ার প্রত্যয় তাদের নিজ নিজ যে পরিকল্পনা, প্রত্যাশা, ভাবনা চিন্তা তা প্রত্যেকটি এক মিনিটের রিল ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে সাবমিট করতে পারবেন। এই রিল হতে পারে ছোট্ট একটা ভিডিও যেখানে যে কোনো কন্টেন্টের মাধ্যমে প্রত্যেকটা অংশগ্রহণকারী তাদের নিজেদের বক্তব্য, স্যাটায়ার, গান, সংলাপ, ডকুমেন্টারি অ্যানিমেশন কিংবা কয়েকটি ছবি বা আর্টের সমন্বয় সেটি সাবমিট করতে পারবেন। যার মাধ্যমে হতে পারে গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে নতুন কোন ভাবনা হতে পারে সুবিস্তৃত কোন পরিকল্পনা কিংবা ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, আমার ভাবনায় বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশ গড়ার মহাপরিকল্পনায় দেশের প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া এবং একটি গণমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ মানুষের যে ভাবনা এবং পরিকল্পনা সেগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিন্তাগুলোকে পৌঁছে দিতে চাই এবং তৃণমূলের সাথে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বে যদি বিএনপি আসে সেই দলের সকল পর্যায় নেতাকর্মীর একটি আন্তরিকতার এবং সৌহাদ্যের মেলবন্ধন তৈরি করতে চাই। বাংলাদেশের সকল তরুণ তরুণী যুবক-যুবতীসহ যে কোনো বয়সের যে কোনো নাগরিক তিনি দেশে থাকুক কিংবা দেশের বাইরে থাকুক যেন নিজের ভাবনাকে সর্বোচ্চ সৃজনশীল তার মাধ্যমে কন্টেন্ট রূপে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারেন সেই সুযোগ আমরা এর মাধ্যমে তৈরি করে দিতে চাই।
তিনি জানান, আমার ভাবনায় বাংলাদেশ এই কর্মসূচির সবচাইতে বড় চমক হচ্ছে, যারা বিজয়ী হবেন মেধাভিত্তিক সেই বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের শীর্ষ ১০ জনকে আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একান্ত আলাপচার সুযোগ দিব।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জিয়া উদ্দিন হায়দার, চেয়ারপারসনের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য সাইমুম পারভেজ এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।