Image description

৪০তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ হাতেনাতে আটকের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষক। রাজনৈতিক প্রভাব ও তদবিরের অভিযোগের মধ্যেই আলোচিত ওই মামলায় খালাস পান কুবির মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ, যা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বিচারপ্রক্রিয়া, নিয়োগ স্বচ্ছতা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে।

মামলার চার্জশিটসূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ মে অনুষ্ঠিত ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা চলাকালীন সময় ঢাকা কলেজ থেকে আবু ওবায়দা রাহিদকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ আটক করে ডিবি পুলিশ। এর পাশাপাশি মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মো. ওবাইদুল্লাহ আল-মামুন এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে মো. রাশিদ উদ্দিনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জাফর আহম্মেদ ও তার সহকারী মো. নাজমুল হায়দার। তারাও একই দিন আটক হন। তাদের বিরুদ্ধে ৪ মে পাবলিক পরীক্ষা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, চক্রটি আগে থেকেই বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল এবং মোবাইলের মাধ্যমে বিসিএসের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করত। তারা অন্য সহযোগীদের যোগসাজশে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে ফাঁস করার পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা মোতাবেক প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করা এবং প্রচেষ্টা করায় পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০-এর ১৩ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হইয়াছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এই মামলার চার্জশিট গঠন করা হয়। 

তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় ডিভাইসসহ আটকের পরেও ‘সাক্ষী উপস্থিত না থাকায়’ পরবর্তী সময়ে রাহিদসহ অন্যদের অব্যাহতি দেন আদালত। যদিও মামলার সংবাদদাতা এবং অভিযোগকারী এসআই মো. আশিক বাহার বলেন, ‘আমাকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য যতবার ডাকা হয়েছে আমি গিয়েছি। দু-একবার হয়তো রাষ্ট্রীয় কাজে থাকার কারণে যেতে পারিনি। সাক্ষী না আসার কারণে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এই রায় কেন দিয়েছে, এটা বিচারক জানেন। আমি বদলি হয়ে যাওয়ার পর এই মামলার ব্যাপারে আর কিছু জানি না।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুশংকর মল্লিক বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত পাঁচজনকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সহ আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে চার্জশিট হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের নামে মামলা হয়। মামলার বাকি বিষয় কোর্ট জানবেন।’

এ মামলায় রাহিদের পক্ষের আইনজীবী মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় আসামী খালাস পেয়েছেন। এমন কত আসামি আছে প্রমাণসহ আটক হয়েও খালাস পেয়ে যান।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ মামলায় রাহিদ অব্যাহতি পান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর সে বছরের ২৯ জানুয়ারি তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করলেও তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে তখন নিয়োগ দেন তৎকালীন আওয়ামী সমর্থিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা অনুযায়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৭০ থাকার কথা থাকলেও সেই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আবু ওবায়দা রাহিদকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফল ছিল যথাক্রমে ৩.৫৬ ও ৩.৫৪।

এই নিয়োগের জন্য তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন অননুমোদিতভাবে একটি নতুন শর্ত যুক্ত করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, যেখানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ফলাফলের যোগ্যতায় শিথিলতার সুযোগ রাখা হয়, যা সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত ছিল না। 

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আবু ওবায়দা রাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মামলার বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি অনেক ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ব্যাপারে আমরা অবগত নই। অবগত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, দেখব।’