Image description
রিমান্ড শুনানিতে ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার রিমান্ড শুনানিতে ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া আদালতকে বলেছেন, ঘটনার দুই-তিন দিন আগে তার সঙ্গে দেখা হয়। এরপর আর দেখা হয়নি। ঘটনার দিন কথা হয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে কথা বলেনি। গভীর রাতে বাসায় আসত আবার ভোরে চলে যেত। সোমবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে আদালতে হাজির করে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, হাদি ঢাকার একটি আসনের সংসদ- সদস্য প্রার্থী ছিলেন (সম্ভাব্য)। ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পর ফয়সাল করিম মাসুদ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার তাকে ধরতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। আর এ তিনজন তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি। তারা একইসঙ্গে, একই ঘরে ছিল। এরপর বের হয়ে যায়। স্বাধীন, সার্বভৌম দেশকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

এরপর আদালত জানতে চান, আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী আছেন কি না। এ সময় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় বিচারক জানতে চান, তাদের কিছু বলার আছে কি না।

তখন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা আদালতকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। ঘটনার দুই-তিন দিন আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়। এরপর আর দেখা হয়নি। ঘটনার দিন কথা হয়। এরপর থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। আমাদের সঙ্গে থাকে না। গভীর রাতে বাসায় আসত আবার ভোরে চলে যেত। তিনি বলেন, ঘটনার আগে থেকে হাদির সঙ্গেই ছিল ফয়সাল। ঘটনার দুই-তিন দিন আগে থেকে আমার সঙ্গে কথা হতো না।

আসামি শিপু আদালতকে বলেন, আমি ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। পরে ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তারের পরিচয় জানতে চান আদালত। এসময় মারিয়া বলেন, সে আমার বন্ধু। ফেসবুকে পরিচয়। এসব বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। আর্থিক সমস্যার কারণে কিছু টাকা দেবে বলে জানায়। এরপর আবার সাহেদা আদালতকে বলেন, আমার দুই বছরের একটি বাচ্চা আছে। যা তথ্য দেওয়ার দিয়েছি। আমাদের হয়ে কেউ কথা বলবে বাবার বাড়িতে এমন কেউ নেই। পরে আদালত থেকে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

রোববার রাত আড়াইটার দিকে নরসিংদীর সদর থানা এলাকা থেকে সামিয়া ও শিপুকে এবং মারিয়াকে সোমবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, আসামি ফয়সাল করিম মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গঠন করে এর মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এ কারণে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং একাধিকবার হত্যার হুমকি পান।

এজাহারে বলা হয়, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, হেলমেট পরিহিত দুই সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনার সময় একই অটোরিকশায় থাকা তার ভাই ওমর বিন হাদি ও অন্য সহকর্মীরা ফুটেজ দেখে আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদকে শনাক্ত করেন। এজাহারে আরও বলা হয়, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা, প্রার্থীদের মনোবল দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।