Image description
আলী আহমেদ মাবরুর (Ali Ahmad Mabrur )
 
শরীফ ওসমান হাদীর বিরুদ্ধে হত্যা প্রয়াসের পর থেকে বারবার খালিদ মিশালের কথা মনে পড়ছে। খালিদ মিশালকেও ঠিক একইভাবে কানের পাশ দিয়ে বিষাক্ত ও প্রাণঘাতী উপাদান ইনজেক্ট করানো হয়েছিল।
১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে এই ঘটনা ঘটে। সে সময় খালেদ মিশাল ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হা মা সের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মোসাদের দুই এজেন্ট কানাডীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে আম্মানে প্রবেশ করে। তারা খালেদ মিশালের অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিল।
 
মিশাল যখন অফিসে ঢোকার পথে ছিলেন, তখন পেছন থেকে একজন এজেন্ট তাঁর কানের কাছে একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে দ্রুত স্প্রে করে দেয়। সেই স্প্রেতেই ছিল একটি উচ্চমাত্রার স্নায়ুবিষ, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শরীরের ভেতরে ঢুকে হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র বিকল করে দেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিশাল কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কথা ছিল—অথচ কেউ বুঝতেই পারত না এটি হত্যা।
 
কিন্তু ঘটনা মোসাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়নি। বিষ প্রয়োগের পরপরই খালেদ মিশাল অস্বাভাবিক অনুভব করেন এবং তাঁর দেহরক্ষীরা দ্রুত বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া করে ধরে ফেলে। এদিকে মিশালের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি শুরু হয়—তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তাঁর জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। তাঁকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
 
এই সময় ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নেয়। জর্ডানের রাজা হুসেইন বিষয়টিকে তাঁর দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখেন। তিনি ইসরায়েলের কাছে কঠোরভাবে দাবি জানান—বিষের প্রতিষেধক না দিলে খালেদ মিশাল মারা গেলে তার সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলের ওপর বর্তাবে। একই সঙ্গে আটক মোসাদ এজেন্টদের বিচারের হুমকি দেওয়া হয়।
 
চাপে পড়ে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পিছু হটতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল জর্ডানে বিষের অ্যান্টিডোট (প্রতিষেধক) পাঠায়। সেই প্রতিষেধক প্রয়োগের পর ধীরে ধীরে খালেদ মিশালের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। এটি ছিল আধুনিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা—একটি রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের ভেতরে রাজনৈতিক নেতা হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এবং উল্টো প্রতিষেধক দিতে বাধ্য হয়।
 
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। খালেদ মিশাল রাতারাতি শুধু হামাসের নেতা নন, বরং ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হামাসের ভেতরে তাঁর অবস্থান আরও শক্ত হয়, আর আরব ও মুসলিম বিশ্বে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণ বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা হাদীকেও এভাবে ফিরিয়ে আনুন। আগামীর বাংলাদেশে তাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার তাওফিক দিন। আমিন।
শরীফ ওসমান হাদীর জন্য দোয়া অবিরাম...