ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই ‘সাবেক উপদেষ্টা’ হিসেবে নাম লিখিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দুজনই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। তবে মাহফুজ ও আসিফ কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। মাহফুজ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন। বুধবার বিকেলে উপদেষ্টারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা তা গ্রহণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হয়।
মাহফুজ ও আসিফের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তারা কেউই এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পোঁছাননি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়াও বিএনপি এবং গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) এবং আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত।
তারা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের গড়া দল এনসিপিতে যোগ দেওয়ার আলোচনা বেশি। এনসিপির অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সূত্রটি বলছে, আসিফ ও মাহফুজ দুজনই দলের শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ চান। এনসিপির পক্ষ থেকেও সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সম্মানজনক কোনো পদ সৃষ্টি করা হতে পারে—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এনসিপির সঙ্গে তাদের কিছু টানাপোড়েনও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে তারা অন্য কোনো রাজনৈতিক গন্তব্যের দিকেও হাঁটতে পারেন।
মাহফুজ ও আসিফের আরেকটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তারা দুজনই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে আগ্রহী। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে তারা কথাও বলেছেন। তবে তাদের আসনে এরই মধ্যে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করায় তাতে কিছুটা ভাটা পড়লেও সে সম্ভাবনা একদম শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন তারা।
এদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। সেখানে যোগ দিলে শীর্ষ দুই পদের এক পদে তাকে দেখা যেতে পারে। পদত্যাগের আগের রাতে রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আসিফ মাহমুদ। দলটির সূত্র জানায়, আসিফ গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদও আসিফকে দলে নিতে আগ্রহী। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরও আসিফ দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বৈঠক ও দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, তিনি (আসিফ মাহমুদ) এক সময় আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন এবং তার সঙ্গে আমাদের সখ্য আছে। পদত্যাগ করার আগের দিনও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি গণঅধিকার পরিষদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরাও এ ব্যাপারে ইতিবাচক।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। গতকাল ফেসবুকে এ-সংক্রান্ত এক পোস্টে নুর লেখেন, ‘আসিফ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বা ২০ থেকে ২৫ দিনের আন্দোলনের কোনো নেতা নয়। আসিফ ফ্যাসিবাদের উত্তাল সময়ে রাজপথের সংগ্রাম থেকে গড়ে ওঠা নেতা, রাজপথে আমার সংগ্রামের সারথি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় থেকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। অফিসিয়ালি এখনো কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়নি, হয়তো শিগগির সিদ্ধান্ত নেবে।’
নুর আরও লিখেছেন, ‘দায়িত্বে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। বয়সের অনভিজ্ঞতা কিংবা ম্যাচিউরিটির অভাবে হয়তো সেও কিছু ভুল করেছে। আমার কাছে সংগ্রামের অবদানে তার সে ভুল তুচ্ছ। আসিফকে সংগ্রামের রাজনীতিতে স্বাগত জানাই।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়া ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম রাজনীতির মাঠে নামতে আগেই পদত্যাগ করে এনসিপি গঠন করেছেন। হয়েছেন দলটির আহ্বায়ক। এবার বাকি দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মো. মাহফুজ আলমও কি সেই পথেই হাঁটছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি যুক্ত হওয়ার বিষয়টি না বললেও সেই প্রত্যাশা জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘তারা (মাহফুজ-আসিফ) এনসিপিতে এসে সংস্কারের পক্ষে কাজ করুক এটাই প্রত্যাশা করব। তবে কারও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে কিছু বলব না। এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনও জানিয়েছেন, দুজন এনসিপিতে যোগ দিতে চাইলে তারা সাদরে গ্রহণ করবেন।
গতকাল পরবর্তী গন্তব্য ও নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। আসিফ বলেন, ‘আপাতত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করব।’
অন্যদিকে মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, তিনি দু-তিন দিন সময় নিচ্ছেন। এরপর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।