জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণপদোন্নতি-পদায়নের ঘটনা ঘটেছে। আর এই পদোন্নতি ও ভালো পদায়ন বাগিয়ে নিয়েছেন বিতর্কিত কর্মকর্তাদের একাংশ।
বৃহস্পতিবার একদিনে দুই হাজার ৭০৬ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ৯৯৫ জন। আর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এক হাজার ৭১১ জন। ৫৫ জনকে বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষ পদে পদায়ন করা হয়েছে।
যাদের মধ্যে রয়েছে ফ্যাসিস্ট ও বির্তকিত কর্মকর্তারা। এর পেছনে বড় একটা সিন্ডিকেট কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই পদোন্নতি ও পদায়নে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেনও হয়েছে। এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা ও উন্নয়ন শাখা এবং মন্ত্রণালয়ের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদের বিতর্কিত কর্মকর্তারা জড়িত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন থেকে এ পদোন্নতির তথ্য পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপন দুটিতে সই করেছেন যথাক্রমে উপসচিব মো. আব্দুল কুদ্দুস ও উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) তানিয়া ফেরদৌস।
পদোন্নতি পাওয়া সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ২৮তম বিসিএসের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এই পদোন্নতির জন্য ব্যাচের প্রত্যেক কর্মকর্তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা উঠানো হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়ার পর আরও দুই হাজার টাকা দিতে হবে। আমাদের ব্যাচে থেকে সেই হিসাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা চাঁদা উঠানোর কথা।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কেউ হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, আবার ৪ জন সহকারী প্রকৌশলী চলতি দায়িত্ব হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী হয়েছেন।
এছাড়া গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন-৩ শাখা ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি করে আদেশ জারি করেছেন। এতে সাক্ষর করেন উপসচিব এ এস এম শাহরিয়ার জাহান।
এর মধ্যে নরসিংদী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদুল করীমকে রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করে পদোন্নতি ও পদায়ন দেওয়া হয়েছে। যিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা প্রকৌশল পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এই পদোন্নতি নিয়ে দপ্তরে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন গোপালগঞ্জ এক্সেন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সার্ভ করা প্রতিভা সরকারকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সূত্র বলছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা চলমান রয়েছে। এরপরও তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
অন্যদিকে মেধা তালিকায় এক নম্বরে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবালকে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে বরিশাল বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও শাহজাহান আলীকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন নির্যাতিত ও প্রাইজ পোস্টিং বঞ্চিত ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসূফ আলীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে এবারও সিলেট সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও শিক্ষা প্রকৌশলের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীরও অদ্ভুত অর্ডার করা হয়েছে। তার মূল পদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলেও তিনি বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে পৃথক আদেশে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদীকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী চলতি দায়িত্ব ও প্রধান প্রকৌশলী রুটিন দায়িত্ব হিসেবে পদায়ন করা হল। তিনি এর আগে কার্যত রংপুর সার্কেলে ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে ময়মনসিংহ সার্কেলের অধীন বেতন তুলবেন। একই সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান শওকতকে ঢাকা মেট্রো সার্কেলে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে পৃথক প্রজ্ঞাপনে ৪ সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে (চলতি দায়িত্ব) পদায়ন দেওয়া হয়েছে। ৫ শর্তে মন্ত্রণালয় এ আদেশ জারি করে। এরমধ্যে সাহেব আলীকে মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশরীর পদে, মফিকুল ইসলামকে ভোলায়, অনুপম বড়ুয়াকে ফেনী অফিসে এবং মো. আব্দুস সালামকে নেত্রকোণায় পদায়ন করা হয়েছে।