Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুরের তিনটি সংসদীয় আসনেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ তিন দলই আসনগুলোতে নিজস্ব অঙ্গীকার নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে।

মাদারীপুর-১ (শিবচর) : ১৯ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়ে গঠিত শিবচর উপজেলাই মাদারীপুর-১ আসন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরা আক্তার। কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন। তাঁর প্রয়াত স্বামী নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরী শিবচরের পরিচিত বিএনপি নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন।

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সরোয়ার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আকরাম হোসেন।

নাদিরা আক্তার বলেন, ‘শিবচরের মানুষের ভালোবাসা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে। বিভেদ ভুলে দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও অবহেলিত মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছি।’ জামায়াতের সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ন্যায়, শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে রাজনীতি করি। শিবচরের মানুষ আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, তার প্রতিদান উন্নয়ন ও সেবার মাধ্যমে দিতে চাই।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আকরাম হোসেন বলেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবতা ও ন্যায্য সমাজকাঠামো গঠনের দায়িত্ব নিয়েই মানুষের পাশে থাকতে চাই। শিবচরের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারলে সেটাই হবে আমার সাফল্য।’

মাদারীপুর-২ (সদরের একাংশ এবং রাজৈর) : মাদারীপুর সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এবং রাজৈর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা মিলিয়ে মাদারীপুর-২ আসন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহান। চার দশকের বেশি সময় ধরে মাঠের রাজনীতি করে আসা জাহানদার আলী জাহান সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ আসনে জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আবদুস সোবহান, আর ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরি। বিএনপির জাহান্দার আলী জাহান বলেন, ‘৪৬ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। মনোনয়ন প্রাপ্তি আমার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বহু বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানুষের ন্যায্য অধিকার ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’ জামায়াতের মাওলানা আবদুুস সোবহান বলেন, ‘সততা ও নীতির পথে থেকে মানুষের সেবা করাই আমার রাজনীতি। এ অঞ্চলের সমস্যা সমাধান ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে কাজ করতে চাই।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরি বলেন, ‘ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজ গঠন ও মানুষের কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে চাই। রাজনীতি আমার কাছে দায়িত্ব, সুযোগ নয়।’

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার এবং সদরের একাংশ) : মাদারীপুর সদর উপজেলার একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে মাদারীপুর-৩ আসন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহগণশিক্ষা সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার। তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক তৎপরতার জন্য তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়।

জামায়াতের প্রার্থী জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা আজিজুল হক।

বিএনপির আনিসুর রহমান খোকন বলেন, ‘শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়ন এসব লক্ষ্য নিয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের মানুষের পাশে থাকতে চাই। তাদের আস্থা অর্জনই আমার প্রথম লক্ষ্য।’ জামায়াতের মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সততা ও শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জনকল্যাণমুখী কাজের মাধ্যমেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাই।’ ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সেবা, ন্যায় ও মানবতার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। মানুষের উন্নয়নই আমার সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু।’

এদিকে মাঠের তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিটি আসনে তিন দলের তিন প্রার্থী নিশ্চিত হওয়ায় এলাকায় নির্বাচনি উত্তাপ বাড়ছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারের মাঝেও নতুন সমীকরণ ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। তিন আসনেই মনোনয়ন ঘোষণার পর বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ধারণা পাওয়া গেছে, তিন আসনেই বিএনপির জনসমর্থন বেশ ভালো। তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনও পিছিয়ে নেই।

 বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতৃত্ব, জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার দিক থেকে তিন আসনেই বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কঠিন লড়াই হতে পারে।