লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে তিন বাংলাদেশিকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ও অডিও রেকর্ড পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। অপহরণকারী চক্রটি ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলেছেন। এতে দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে দুটি পরিবার মুক্তিপণের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছে।
লিবিয়ায় অপহৃত প্রবাসীরা হলেন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের গুডুম্বা গ্রামের গোলাম রব্বানী, একই ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া দক্ষিণ মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম এবং একই উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা গ্রামের রুহুল আমিন। এর মধ্যে গোলাম রব্বানীকে পনেরো দিন আগে এবং অন্য দুজনকে ছয়-সাত দিন আগে অপহরণ করা হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিন ও আব্দুল করিম সম্পর্কে শালা-ভগ্নিপতি।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মোছাঃ জুথি আক্তার বলেন, “আমার স্বামী গোলাম রব্বানী ২০১৫ সালে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় কাজের জন্য গিয়েছিলেন। কয়েক বছর কাজ করার পর ছুটিতে বাড়ি এসে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আবারও লিবিয়ায় যান। সেখানে জিলথান শহরে অবস্থান করছিলেন। ১৫ দিন আগে রঙের কাজের কথা বলে একটি মাফিয়া চক্র আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে। ৩০ নভেম্বর আমার মুঠোফোনে কল দিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ ব্যাংকের হিসাব নম্বর ২৭৬১৫৭০৩২৬৮৪০, রাউটিং নম্বর ০৯০২৭১৩৯৯-এ জমা দিতে বলা হয়। এরপর তাঁরা আমার স্বামীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়েছে। বর্তমানে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছেন এবং টাকা না দিলে তাঁকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। আমি ৮ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে আমার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করেছি।”
মোছাঃ জুথি আরও বলেন, “ঘটনার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। তাঁরা সব সময় শুধু টাকা চাচ্ছেন। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। জানি না এখন আমার স্বামী কী অবস্থায় আছেন।”
অপহৃত মোঃ আব্দুল করিম মন্ডলের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, “আমার স্বামী ১৩ বছর ধরে লিবিয়ায় রয়েছেন। গত বছর আট মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন। চলতি বছরের ছয়-সাত মাস আগে আবারও লিবিয়াতে গিয়েছেন। ৬ ডিসেম্বর রঙের কাজ করানোর জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে কাজের চুক্তি করা হয়, তারপর তাদের আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ইতিমধ্যে মুক্তিপণের কিছু টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।”
অপহৃত রুহুল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, “স্বামী আটক হওয়ার আগে আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানিয়েছিলেন যে কাজ দেখতে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি লিবিয়ায় থাকা এক বড় ভাইকে ছবি তুলে পাঠান। একদিন পর তাঁর মুঠোফোন থেকে কল ও নির্যাতনের অডিও রেকর্ড পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এখন সর্বশেষ ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। আমরা অনেকে কষ্টে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছি।”
আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন রেজা বলেন, “লিবিয়ায় গিয়ে তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছে বিষয়টি জেনেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”