রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা প্লট হস্তান্তরে রাজউকের অনুমোদন লাগতো। এতে গ্রহীতাদের ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হতো। ছিল ঘুষ-দুর্নীতির রমরমা ব্যবসা। এই ভোগান্তি লাঘবে সরকার প্লট হস্তান্তরে অনুমতির নিয়ম বাতিল করেছে। এতে গ্রাহকরা স্বস্তির আশা করলেও এখন পড়েছেন নতুন ভোগান্তিতে। প্রজ্ঞাপনের একটি ধারার কারণে এখন কোনো ভাবেই প্লট হস্তান্তর করতে পারছেন না গ্রাহকরা। প্রজ্ঞাপনের ধারায় রাজউকের প্লটের তফসিল তালিকা প্রকাশের আগে প্লট হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না বলে উল্লেখ আছে। প্রজ্ঞাপন হওয়ার এক মাস পার হলেও তফসিল তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি রাজউক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লট মালিকরা।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাঈয়েদা বানু। তার নিজ নামে থাকা রাজধানীর পূর্বাচলে থাকা একটি প্লট তার দুই বোনকে হেবা দলিলে দান (স্বেচ্ছায় দেয়া) করতে চান। তিনি দালিলিক এই কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসেন গত ২৭শে নভেম্বর। কিন্তু আসার পর জানতে পারেন নতুন নীতিমালা অনুযায়ী রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের তালিকা ও প্রজ্ঞাপনের অধীন তফসিল আকারে প্রকাশ না হওয়ায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
গত ১০ই নভেম্বর জারি হওয়ায় প্রজ্ঞাপনের শেষাংশে বলা হয়, যেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা বণ্টন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আমমোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে লিজ দাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। সেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের তালিকা এ প্রজ্ঞাপনের অধীন যথা শিগগিরই সম্ভব, তফসিল আকারে প্রকাশ করা হবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একটি নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিবন্ধন করে জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা যাবে। আগে আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের দলিল সম্পাদনের জন্য লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন অপরিহার্য ছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনের ফলে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান, হস্তান্তর (বিক্রয় বা বণ্টন) সংক্রান্ত দলিল সম্পাদনের জন্য কোনো অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন থাকবে না। তবে প্লটের বিভাজন বা একত্রীকরণ এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ব্যবহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের নিয়ম আগের মতোই বজায় থাকবে। দলিল মূল্য অনুসারে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের জন্য ২ শতাংশ এবং প্লটের জন্য ৩ শতাংশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সরাসরি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হবে। এ ফি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অর্থনৈতিক কোড অনুসারে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) হিসেবে আদায় করা হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেবা সহজীকরণ, লিজ গ্রহীতাদের দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘব এবং দুর্নীতি দূর করতে বিদ্যমান প্রথা ও পদ্ধতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তফসিল তালিকা জারি না হওয়ায় সাইয়েদা বানুর মতো অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। এই প্রবাসী বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের আলোকে তফসিল এখনো প্রকাশ না হওয়ায় আমি দলিল সম্পাদন করতে পারছি না। আমি তিন সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছি। এই সময়ের মধ্যে দলিল সম্পাদন না হলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। তিনি যোগ করেন, গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কোনো সুরাহা পাইনি। তার আবেদন থেকে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় তার ১০ কাঠার প্লট কোডের শেষ তিন ডিজিট (০২২) রয়েছে। এই প্লটটি তিনি ছুটি শেষ হওয়ার আগেই হেবা দলিল সম্পন্ন করতে চান।
গতকাল রাজউকের মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, এরকম প্রায় প্রতি সপ্তাহে দু’একজন আবেদন নিয়ে আসেন। জানা যায়, বিরোধপূর্ণ জমির কারণেই তফসিল প্রস্তুতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, তফসিলের কাজ চলমান। রাজউক নিয়মিত তালিকা পাঠাচ্ছে। শিগগিরই এটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে। রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) মাসুম আলী বেগ বলেন, তফসিল প্রকাশের কাজ চলমান আছে। অফিস সময়ের বাইরেও কাজ চলমান রয়েছে। নিয়মিতই আপডেট পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে। আগামী রোববার কিছু তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাজউক পরিচালক (প্রশাসন) এ. বি. এম. এহছানুল মামুন বলেন, আমরা তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত পাঠাচ্ছি। প্রায় ৬০ শতাংশ তালিকা পাঠানো হয়েছে। নিয়মিতই পাঠানো হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ তফসিল প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।