Image description

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো আমদানি কার্গো হাউসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক উদ্ধার করা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সর্বশেষ গত সপ্তাহে কার্গো হাউসের (কুরিয়ার শাখা) পোড়া ময়লার স্তূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় মিলেছে ৮টি পিস্তল ও একটি শটগান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় এই অস্ত্রগুলো সংরক্ষিত থাকার কথা ছিল কার্গো হাউস থেকে আধা কিলোমিটার দুরে অবস্থিত স্ট্রংরুমে। আগুনে সেই স্ট্রং রুম ছিল অক্ষত। সম্প্রতি ময়লার স্তূপ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯টি অস্ত্র উদ্ধারের পর প্রশ্ন উঠেছে- আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্ট্রংরুমে আগুন না লাগলেও সেখানকার অস্ত্রগুলো পুড়ল কীভাবে? ধ্বংসাবশেষে সেগুলো আসার কারণ কী?

কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ধারণা করছেন- অগ্নিকাণ্ডের আগে চুরি করে কুরিয়ার শাখায় অস্ত্রগুলো সরিয়ে রেখেছিল চোরচক্র। সব বিষয় মাথায় রেখে এখন তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সপ্তাহে ধ্বংসাবশেষ সরানোর সময় কার্গো হাউসের পোড়া কুরিয়ার শাখার ময়লার স্তূপ থেকে ৮টি পিস্তল, একটি শটগান এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। সর্বশেষ অভিযানে আবারও পরিত্যক্ত অবস্থায় নয়টি পোড়া অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পিস্তল ও

শটগানের বিভিন্ন অংশ এবং উপাদান, যা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত স্ট্রংরুমেই থাকার কথা। উদ্ধারের পরপরই বিমানবন্দর পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘেরাও করে অস্ত্রগুলো জব্দ করেন। নিরাপত্তা সংস্থা ও তদন্তকারী ইউনিট বিস্তারিত নমুনাও সংগ্রহ করেছে। অস্বাভাবিক বিষয় হলো- স্ট্রংরুম অক্ষত, নথিও অক্ষত, অথচ বাইরে ধ্বংসাবশেষে মিলছে অস্ত্র। এটি শুধু ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নয়; বরং কোথাও না কোথাও গুরুতর অনিয়ম বা গোপনীয়তা লুকানোরও ইঙ্গিত রয়েছে।

অস্ত্রগুলো আগে কোথায় সংরক্ষিত ছিল, কীভাবে বাইরে এলো, কারা দায়ী- এসব প্রশ্ন এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু। বিষয়টিকে ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত চলছে। স্ট্রংরুম সিল হওয়ার আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে অস্ত্র সংরক্ষণ বা জব্দ প্রক্রিয়ার অনিয়ম আগেই ধরা পড়ত।

গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে কার্গো হাউসে। এরপর কার্গো হাউসের স্ট্রংরুমের পণ্যের তালিকা তৈরি করতে ১৭ নভেম্বর কাস্টমস ও বিমানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ২০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি স্ট্রংরুম তল্লাশি করে এসব অস্ত্রের সন্ধান পায়। কার্গো হাউসে অগ্নিকাণ্ডের পর স্ট্রংরুম থেকে মালামাল হারানোর অভিযোগ ওঠে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, আগুনে বহু মালামাল পুড়ে গেছে।

বাস্তবে দেখা যায়, ভল্টে আগুন লাগেনি; ভল্ট ছিল ভাঙা এবং সেখান থেকে অস্ত্র গায়েবের ঘটনা ঘটে। এর পর আমদানি কার্গো হাউসের স্ট্রংরুমের ভল্টে পাওয়া যায় আরও ৩৬টি অস্ত্র। তিনটি কার্টন থেকে উদ্ধার করা হয় এসব অস্ত্র। স্ট্রংরুমের আমদানি পণ্যের তালিকা করতে গিয়ে অস্ত্রের চালানটি পাওয়া যায়। স্ট্রংরুমে আগুন না লাগলেও বাইরে অস্ত্র পাওয়া অস্বাভাবিক এই ঘটনার পর প্রতিটি অস্ত্রের উৎস, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া এবং অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য যোগসূত্র পরীক্ষা চলছে বলেও জানান তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো সংবেদনশীল স্থানে ধ্বংসস্তূপে অস্ত্র পাওয়া কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিনের তদারকির ঘাটতি, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং সম্ভাব্য অসদাচরণের প্রতিফলন। অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো কার্গো হাউসে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রবেশপথে স্ক্যানিং বৃদ্ধি, অতিরিক্ত পুলিশ টহল ও নজরদারি চলছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর সিরিয়াল নম্বর, উৎপত্তি এবং সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের তথ্য মিলিয়ে সমন্বিত তদন্ত চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের জিএম বোশরা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।