Image description
লিবিয়া হয়ে ইতালি যাত্রা

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার দুই মাস আট দিন পরও খোঁজ মেলেনি হবিগঞ্জের ৩৮ যুবকের। জেলা পুলিশ মানব পাচার চক্রে জড়িত হাসান মোল্লাসহ আটজনকে নোটিস দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ভিকটিম পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন সাংবাদিকদের কাছে এ আহ্বান জানান।

এ ছাড়া হাসান মোল্লার চার সহযোগী মোস্তাকিম, তফছির, মিজান ও সোহাগকে অনুসন্ধানের স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহের কার্যালয়ে উপস্থিত করানোর জন্য আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, লিবিয়ার কারাগার, হাসপাতালসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

নিখোঁজদের প্রতিটি পরিবার ইতালি পাঠানোর আশায় স্থানীয় ‘আদম বেপারি’ হাসান মোল্লার হাতে ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। এখন প্রিয়জনের মৃত্যুর আশঙ্কায় পরিবারগুলো আতঙ্কগ্রস্ত। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে কেউ মুখ খুলছেন না, আইনি পদক্ষেপেও যাচ্ছেন না। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালিগামী নৌকায় ত্রিপলি উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় স্বজনদের। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ওই তরুণদের সন্ধান ও উদ্ধারে উদ্যোগ নিতে লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসকে নির্দেশ দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তারাও কোনো সন্ধান পায়নি।

বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়ার প্রথম সচিব মো. রাসেল মিয়া বলেন, তারা বিভিন্ন দেশ হয়ে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছেন। তাদের সঠিক তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। দেশ থেকে চিঠি পাওয়ার পর সম্ভাব্য কারাগার ও হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়েছি। সেখানে তাদের পাওয়া যায়নি। রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থাও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, এর আগেও গত মার্চে ১৫ জন বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এতদিনেও তাদের খোঁজ মেলেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা সাগরে ডুবে মারা গেছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে চারটি নৌকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৮ জনসহ প্রায় ৯০ জন ছিলেন। সেই নৌকাটিই নিখোঁজ হয়েছে। বাকি তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছেছে। আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী হাসান আশরাফ ওরফে হাসান মোল্লার মাধ্যমে ওই ৩৮ জন ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হবিগঞ্জসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লিবিয়ায় নিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের ইতালিতে পাঠানোর ‘দালাল’ হিসেবে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছেন হাসান মোল্লা। মাত্র ছয় মাসে প্রায় এক হাজার মানুষকে ইতালিতে পাঠিয়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

অভিযোগ রয়েছে, ত্রিপলির উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগরে ১০ ঘণ্টার নৌপথে মানুষ ইতালি পৌঁছে দেন হাসান। ছয় মাসে এ ব্যবসা থেকে তিনি অর্জন করেছেন শত কোটি টাকা। ৩৮ বাংলাদেশিসহ ৯০ জন নিখোঁজ হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে হাসানের এ ‘আদম ব্যবসা’।