Image description

অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া গোপালগঞ্জের আশিক মিনা (২৮) দেশে ফিরেছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তত্ত্বাবধানে গত ৫ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে দেশে ফেরেন তিনি। আশিক গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পূর্ব লওখণ্ডা গ্রামের মৃত হায়দার মিনারের ছেলে।

দ্য ডেইলি স্টারকে আশিক মিনা বলেন, আমিসহ আমাদের গ্রামের আরও ছয়জন দালালের মাধ্যমে নৌকায় চড়ে অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার জন্য গত ১৯ অক্টোবর রওনা হই। তাদের কেউই এখনো বাড়ি ফেরেননি। 

তিনি বলেন, তাদের কেউ কেউ নিখোঁজ, কেউ জেলে বা লিবিয়াতে চিকিৎসাধীন। তারা না ফেরা পর্যন্ত দলালদের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আশিক আরও বলেন, আমরা প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাই। সেখান থেকে মিশর হয়ে আমাদের লিবিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রায় এক মাস বাঙালিদের বাসায় ছিলাম। এরপর ১৪ নভেম্বর রাতে আমাদের লিবিয়ানদের বাসায় নেওয়া হয়। ১৫ নভেম্বর রাতে সাগরপাড় থেকে আমাদের স্পিডবোটে তোলে। বোটটি ছাড়ে রাত সাড়ে ৮টায়। আর দুর্ঘটনা ঘটে রাত সাড়ে ৯টা বা ১০টার দিকে।

'বোট ছাড়ার কিছুক্ষণ পর দেখি সামনে কোস্টগার্ডের বোট। আমরা ভেবেছিলাম, ওরা আমাদের এগিয়ে দেবে। সাধারণত কোস্টগার্ডের সঙ্গে চুক্তি করা থাকে, তারাই বোটগুলোকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের বোটের চুক্তি ছিল না। অনেকক্ষণ পর কোস্টগার্ডের সদস্যরা গুলি ছোড়ে। তখন আমাদের বোট এক জায়গায় ঘুরতে থাকে এবং ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে কোস্টগার্ডের বড় জাহাজ আমাদের বোটের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এরপর কী হয়েছে, কে কোথায় গেছে, কিছুই বুঝতে পারিনি।'

তিনি আরও বলেন, একই গ্রামের সাতজন ছিলাম। তাদের অবস্থা কী হয়েছে, তা-ও জানি না। বোট একদম ভেঙে গিয়েছিল। 

আশিক আরও বলেন, গুলিতে কেউ মারা যাননি। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মনে হয়েছে, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। কোস্টগার্ডের সদস্যরা যেন খেলা দেখছিল, মানুষের জীবন কীভাবে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে শুধু দেখেছে—কারা বাঁচে, কারা মারা যায়। পরে তারা উদ্ধার করেছে। বোটে আমরা ৭৫ জন ছিলাম। মিশরের পাঁচজন, বাকিরা বাঙালি।

তিনি আরও বলেন, আমার পা ভেঙে গেছে। হাতও ভেঙে গিয়েছিল, তবে এখন একটু সুস্থ। আমি ১৯ দিনের মতো চিকিৎসা নিয়েছি। আমাকে তিনটা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে একটায়, তারপর আরেকটায় রেফার্ড করা হয়। অপারেশনের পর আবার অন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। মোবাইল ফোন ছিল না, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। 

তিনি বলেন, লিবিয়াতে আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির মাধ্যমে আমাকে দেশে পাঠিয়েছে। ফ্লাইট ছিল ৪ ডিসেম্বর। ৫ ডিসেম্বর দেশে আসি। আমি কখনো কল্পনাও করিনি, আবার মায়ের মুখ দেখতে পারব।

আশিক বলেন, দেশে আসার পর আমি সবাইকে একটা কথাই বলি—এই পথে কেউ পা দিও না। এটা মরণপথ।

আশিকের মা রওশনারা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, মৃত্যুর মুখ থেকে আমার ছেলে ফিরে এসেছে। আমি জমি বিক্রি ও ঋণ নিয়ে দালালকে ২১ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর হাসপাতাল থেকে আশিক আমাদের মোবাইল ফোনে সবকিছু জানায়। আমার ছেলে ফিরে এসেছে। আমি আর কিছু চাই না।