Image description

দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা খেলাপির খাতায় চলে গিয়েছে। আদায় অযোগ্য হওয়ায় অবলোপন (রাইটঅফ) করা হয়েছে আরো অর্ধলাখ কোটি টাকার ঋণ। খেলাপি হয়েছে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঋণও। লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে বীমা কোম্পানি ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অর্থও। আর্থিক খাতের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে দেশের আর্থিক খাতের প্রায় সাড়ে ৪২ লাখ কোটি টাকা সম্পদের কতটা বাস্তবে রয়েছে।

দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ কত, সে বিষয়ে একীভূত কোনো তথ্য ছিল না। সম্প্রতি এ সম্পদের মোট আকার নির্ধারণে উদ্যোগী হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিসংখ্যান বিভাগের তৈরি করা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক, বীমা, এবিএফআইসহ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায়। এর ৯৬ শতাংশই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট। আর ১ দশমিক ৬০ শতাংশ সম্পদের অংশীদারত্ব রয়েছে সাধারণ ও জীবন বীমাসংশ্লিষ্ট কোম্পানির। এক্ষেত্রে দেশের পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট কোম্পানির সম্পদ অংশীদারত্ব মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদসহ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সম্পদের হিসাবটি গ্রস। এর মধ্যে কত পরিমাণ সম্পদ গত দেড় দশকে লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে, সেটির উল্লেখ নেই। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ ছিল দেশের আর্থিক খাতের মোট সম্পদের প্রকৃত চিত্র বের করার। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে পথে হাঁটেনি। কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু বেসরকারি ব্যাংকে ফরেনসিক অডিট করে সম্পদের প্রকৃত মান নির্ণয়ের চেষ্টা করেছে। বাকি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সে পথে হাঁটতে দেখা যায়নি। ব্যাংক, বীমার পাশাপাশি দেশের সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুণ্ঠন হয়েছে। ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটন সম্ভব হলে দেখা যেত দেশের আর্থিক খাতের বিপুল পরিমাণ সম্পদেরই হদিস মিলছে না।

আর্থিক খাতের সম্পদের যে তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে সেটি অনেকটা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ প্রবাদের অনুকরণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ প্রধান অর্থনীতিবিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানটি গ্রস হিসাব। বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলো যে তথ্য দিয়েছে, সেগুলো যোগ করে এটি বের করা হয়েছে। কিন্তু আমরা আসলেই জানি না, প্রতিবেদনে যে সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে তার কতটা অক্ষত আছে। কারণ আমরা দেখছি, দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকায় ঠেকেছে। বীমা কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতের বহু কোম্পানির পরিস্থিতি দেউলিয়া। গ্রস তথ্য দিয়ে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের পরিমাপ করার কোনো মূল্য নেই।’

 

মোস্তফা কে মুজেরী আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ ছিল দেশের আর্থিক খাতের প্রকৃত সম্পদ উদ্ঘাটনে ফরেনসিক অডিট করানোর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোথাও এ উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত দেড় দশকে আর্থিক খাতে সীমাহীন ক্ষত হয়েছে। মলম দিয়ে এ ক্ষত সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এজন্য শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। কিন্তু সে ধরনের কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফে আমরা দেখতে পাইনি।’

দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রকাশ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘‌আ রিপোর্ট অন আদার ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনস (ওএফসি) সার্ভে’। প্রতিবেদনটি তৈরির ক্ষেত্রে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৭৬৮টি অন্যান্য আর্থিক করপোরেশনের (ওএফসি) মধ্যে ৪৭৭টির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে গত মার্চ প্রান্তিকের প্রতিবেদনে ২৫৬টি প্রতিষ্ঠান তথ্য দিয়েছিল। চলতি বছরের জুন প্রান্তিকের এ প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ও সম্পদ ব্যবস্থাপক, মেয়াদি ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ও বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের আংশিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আংশিক হলেও ওএফসিগুলোর অর্থবহ চিত্র পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে সব প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত হলে আর্থিক করপোরেশনগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা পাওয়া যাবে। এ ধরনের একটি সম্পূর্ণ চিত্র গবেষকদের বোঝাপড়াকে গভীর করবে এবং ঝুঁকি চিহ্নিত করার মাধ্যমে আরো কার্যকর নীতি প্রণয়নে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের প্রধান সম্পাদক ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক মো. মাসুদ আকতার তালুকদার। প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সম্পদমূল্য বিষয়ে সমন্বিত কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ কারণে আমরা উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের আকার নির্ণয়ের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য আমরা পেয়েছি, তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পদের তথ্য নেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন থেকে। সে হিসাবে এটি সম্পদের গ্রস হিসাব। প্রতিবেদনে দেশের সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ তথ্য চলে এসেছে। আগামীতে এটি আরো সমৃদ্ধ করা হবে।’

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার সম্পদ ছিল ডিপোজিটরি করপোরেশনগুলোর (আমানত সংগ্রহকারী ব্যাংক ও এনবিএফআই) কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার সম্পদ।

জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদের কতটা অক্ষত আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ গত এক বছরের কিছু বেশি সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার তিন গুণের বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকাই খেলাপির খাতায়। সে হিসাবে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এখন খেলাপি। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটিতে রূপান্তরের উদ্যোগও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি আরো এক ডজনের বেশি ব্যাংকের পরিস্থিতিও এখন বেশ নাজুক।

অন্যদিকে দেশের ৩৫টি এনবিএফআইয়ের মধ্যে ২১টিরই খেলাপি ঋণের হার এখন ৫০ শতাংশের বেশি। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণ স্থিতি প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৮ হাজার কোটি টাকার ঋণই খেলাপি হয়ে গিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়া নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে আরো ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একেবারই দুর্বল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি ও ৩৩টি জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ ৪৮ হাজার ৭৩৯ কোটি আর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বীমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ বিনিয়োগ, দুর্বল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দাবি পরিশোধে ব্যর্থতার অনেক অভিযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবে এ খাতের সুশাসন ব্যবস্থাপনা দুর্বল। তাছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনে হিসাবমান লঙ্ঘনেরও অনেক উদাহরণ হয়েছে। এ অবস্থায় বীমা খাতের সম্পদের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচএফসি), বিবি ইকুইটি অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড, বিবি গৃহায়ন তহবিল অ্যান্ড ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ ফাউন্ডেশনকে (এসএমইএফ) অন্যান্য ওএফসি হিসেবে এ প্রতিবেদনে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রয়েছে ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার সম্পদ।

আমানত সংগ্রহ করে না এমন পাঁচটি এনবিএফআইয়ের কাছে সম্পদ রয়েছে ২২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকার। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল), সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (সাবিনকো) ও দি ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইউবিনকো)।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৭ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে বিকাশ, নগদ, ট্যাপ ও ইউপের তথ্য প্রতিবেদনে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদ থেকে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে এমএফএস খাতের মোট সম্পদের পরিমাণের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রভাবিত করবে।

পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি ২৬ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। জরিপে ৩৭৪টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১৬৩টি তথ্য দিয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ ১৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ৬৪টি মার্চেন্ট ব্যাংকই তথ্য দিয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে নেগেটিভ ইকুইটির সমস্যা বয়ে বেড়াচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর নেগেটিভ ইকুইটির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসইসির কাছ থেকে ছাড় নিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করছে। এর ফলে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সম্পদের ক্ষেত্রে এ নেগেটিভ ইকুইটির বিরূপ প্রভাব রয়েছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের যে তথ্য উঠে এসেছে তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। তাছাড়া এ সম্পদের মধ্যে বড় অংকের নেগেটিভ ইকুইটিও রয়েছে। বিগত সময়ে দেশের অর্থনীতির আকার যে হারে বেড়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজারের অগ্রগতি তো হয়ইনি, বরং পিছিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এ অবস্থায় সামনে নতুন যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়নকে গুরুত্ব দেবে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।’

১০০টি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৬৮টি এ জরিপের জন্য তথ্য দিয়েছে। এ বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর কাছে ৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর কাছে সম্পদ রয়েছে ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার। ৩৯টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৭টি এক্ষেত্রে তথ্য দিয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। ৭৫টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ও সম্পদ ব্যবস্থাপকের মধ্যে ৪৩টি তথ্য দিয়েছে। বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের সম্পদ রয়েছে ২১২ কোটি টাকার। ১২টি বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের মধ্যে আটটি তথ্য দিয়েছে। আটটি ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির সবাই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি টাকায়। দেশের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। কয়েকটি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও অতীতে দেখা গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে মিউচুয়াল ফান্ড ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের কার্যক্রম ফরেনসিক অডিটের আওতায় আনার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য ওএফসি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪৬ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা সম্পদের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতের মধ্যে পুঁজিবাজারের অবস্থান অতি নগণ্য। পুঁজিবাজারের আকার বাড়াতে হলে এখানে চাহিদা ও জোগান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন ভালো আইপিও আনার পাশাপাশি বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করা ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে গতিশীল করতে হবে। আমাদের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। এখানে যুগোপযোগী নতুন পণ্য আনার পাশাপাশি সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। মন্ত্রণালয়, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সমন্বিতভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি কার্যকর হবে না।’