Image description

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টাব্যাপী গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ভোরে কাজে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিগত ৬ মাস ধরে বিনা নোটিশে রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টাব্যাপী গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার প্রায় দুই হাজার গ্রাহকদের।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রাহকরা যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষে সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন আফতাব ও সেতুল মির্জা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

 

আবেদনে ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবার ও গ্রাহক গ্যাস সুবিধা ব্যবহার করেন। এর বাইরেও কর্ণফুলী পেপার মিল, জুট মিল, বিভিন্ন মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সুবিধার আওতায় রয়েছে। কিন্তু ৬ মাস ধরে রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। ভোক্তারা বহুবার অফিসিয়ালি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু এরপরও গত ছয় মাসে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখায় এলাকার শিক্ষার্থী, রোজাদার মানুষ, চাকরিজীবী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। ফলে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে নিয়োজিত হাজারো মানুষ প্রতিদিনই বিপাকে পড়ছেন। তাই রাত থেকে সকাল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান তারা।

 

গ্রাহক সেতুল মির্জা, কাউসার হোসাইনসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই পরিস্থিতি রাঙ্গুনিয়ার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রমাণ। এ সমস্যার সমাধানে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, রান্না করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে না খেয়ে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দোকানের মানহীন খাবার খাচ্ছেন। এতে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তারা সকল গ্রাহককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি কর্ণফুলী গ্যাসের বিপণন বিভাগ, কাস্টমার কেয়ার ও জরুরি নম্বরে নিয়মিত অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ জানান, গ্যাসের সিস্টেম লসের কারণে রাতের বেলা গ্যাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। গ্যাস চুরি হচ্ছে কিনা নাকি পাইপ লিকেজের কারণে সিস্টেম লস তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে উত্তর কর্নফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জোনাল ম্যানেজার মো. আশিক বলেন, ‘সিস্টেম লসের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গ্যাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটি সারানোর জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে কাজ চলছে।’

তবে গ্রাহকের অভিযোগ রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি ভুল ইনফরমেশন হতে পারে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

পরে গ্যাস বন্ধ আর চালু রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি তাদের অফিসে কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) উপপরিচালক (কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স) মুহাম্মদ রফিকুল আলম ভুঁইয়া লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন। তবে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বললে, সেটি তার পর্যন্ত পৌঁছেনি বলে জানান। সেটি পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।